গতবছর অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল লাদাখ সীমান্তে। আ সেই সমস্যা মিটতে না মিটতেই অস্থিরতা তৈরির ইঙ্গিত মিলছে অরুণাচল সীমান্তে। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অরুণাচলপ্রদেশের বিতর্কিত সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকায় টহল জোরদার করেছে চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি। এই এলাকায় চিনের তরফে নয়া সৈন্যদের নিযুক্ত করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস এই সংক্রান্ত যে তথ্য হাতে পেয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে পিএলএ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সীমান্ত পরিদর্শনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লুংরো লা, জিমিথাং এবং বুম লা - গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব সেক্টরের এই তিন এলাকায় চিনের অতিরিক্ত গতিবিধি লক্ষ্য করেছে ভারতীয় সেনা। উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে, এই এলাকা নিয়ে আগেও বিবাদে জড়িয়েছে ভআরত-চিন। তাই এলাকায় পিএলএ-র গতিবিধি বৃদ্ধি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন উচ্চপদস্থ সেনা কর্তা এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, চিনের তরফে যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হলে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারতীয় সেনা।
লুংরো লা সেক্টরে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৯০টি টহল চালিয়েছে চিন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই টহলের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০। তবে সাম্প্রতিককালে এই টহলের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় চিনের উপর নজরদারি আরও কড়া করেছে ভারত। এদিকে লাদাখ সংঘর্ষের পর থেকে তাওয়াং ও লংরো লা সেক্টরে চিনের উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকদের সফরের সংখ্যা বেড়েছে চার গুণ। ২০১৮-১৯ সালে যে সংখ্যা ছিল ১০, ২০২০-২১ সালে তা গিয়ে ঠেকেছে ৪০-এ।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের হাতে আরও এখটি নথি এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, তাওয়াং সেক্টরের উত্তরে অবস্থিত জিমিথাংয়েও চিনা গতিবিধি বেড়েছে। ১৯৮৬-৮৭ সালে লুংরো লা ও জিমিথাংয়ে একদম সীমান্ত পর্যন্ত চলে গিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেই সময় চিনা সেনার সঙ্গে দীর্ঘ স্ট্যান্ড-অফ হয়েছিল ভারতের। এই জিমিথাংয়েও চিনের টহলের সংখ্যা গত ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে ২০২০-২১ সালে।
এদিকে ভারতীয় সেনাও চিনের সম্ভাব্য যেকোনও হামলা রুখতে প্রস্তুত। প্রসঙ্গত, সিকিম থেকে অরুণাচলপ্রদেশ পর্যন্ত ভারত-চিন সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৪৬ কিলোমিটার। গত প্রায় ১৮ মাস ধরে লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে ভারত। এরই মাঝে সীমান্ত বিবাদের জেরে অরুণাচলেও সম্প্রতি দুই দেশের সেনা মুয়খোমুখি হয়। ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। তবে ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে যে চিন যুদ্ধের অভ্যাসের তীব্রতা বাড়িয়েছে সীমান্ত পারে। পাশাপাশি সেখানে রিজার্ভ ফোর্সও মোতায়েন করেছে পিএলএ। ক্রমেই অরুণাচল সীমান্ত বরাবর পরিস্থিতিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কমান্ডারস্তরে মোট ১৩ দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিবাদের মীমাংসা কিছুই হয়নি। শেষবার এই বৈঠক হয় গত ১০ অক্টোবর। এই আবহে অত্যাধুনিক কামানের পাশাপাশি অরুণাচলপ্রদেশের ভারত-চিন সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের মতো বাহনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।