টানা দুই বছর হল, ক্রমশ নীচের দিকে নামছে চিনের জনসংখ্যার গ্রাফ। ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস রিপোর্ট করেছে যে ২০২৩ সালে মাত্র ৯.০২ মিলিয়ন জন্ম হয়েছে, ২০১৭ সালের তুলনায় যা মাত্র অর্ধেকের সমান। গত বছরে চিনের ১১.১ মিলিয়ন মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন বাসিন্দাকে হারিয়েছে চিন। সাংহাই একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের একটি গবেষণা দলের অনুমান, ২১০০ সালের মধ্যে চিনের জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন থেকে মাত্র ৫২৫ মিলিয়নে নেমে দাঁড়াতে পারে৷ এর মধ্যে কাজ করার মতো ক্ষমতা থাকবে মাত্র ২১০ মিলিয়নে বাসিন্দার। যা ২০১৪ সালের সর্বোচ্চের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ।
- জন্মহার কমছে মৃত্যুহার বাড়ছে
২০২৩ সালের প্রথম কয়েক মাসে কোভিডের উত্থান, মৃত্যুহার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চিনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ জন্মহার হ্রাস। চিনের এক সন্তান নীতির অধীনে ১৯৯১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চিনের মোট উর্বরতার হার, প্রতি মহিলার জন্মের গড় সংখ্যা প্রায় ১.৬৬ ছিল। কিন্তু তারপরে এটি ২০২০ সালে ১.২৮, ২০২২ সালে ১.০৮ এ নেমে আসে এবং এখন ২০২১ সালে তিন-সন্তান নীতির বাস্তবায়ন সত্ত্বেও, জন্মহার কমতেই থাকছে। প্রতি মহিলার জন্মের গড় সংখ্যা, ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে ১.৬৬ থেকে প্রায় ১.০-তে নেমে এসেছে। যা সাধারণত জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১ এর স্তরেরও নিচে।
চিনের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস বলছে, এন্টারপ্রাইজের কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৪৯ ঘণ্টা কাজ করেন, যা দিনে নয় ঘণ্টারও বেশি। নারী কর্মীরা পুরুষদের তুলনায় কম আয় করেন। ক্রমবর্ধমানভাবে সন্তান ধারণ পিছিয়ে দিচ্ছেন তাঁরাও। তবে, ২০২৪ সালে এই জন্মহার কিছুটা হলেও বাড়তে পারে বলে আশা করা যায়। চিনা জ্যোতিষশাস্ত্রে এটি ড্রাগনের বছর হিসাবে সৌভাগ্য বয়ে আনবে। এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যাঁরা ২০২৩ সালে খরগোশের বছরটি অশুভ হিসাবে দেখে সন্তান ধারণ করেনি। কিন্তু এই বছর তাঁরা নতুন সদস্যের পরিকল্পনা করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্রমশ কমতে থাকা চিনের জনসংখ্যা একটি জটিল এবং জরুরি বিষয়। জনসংখ্যাগত সমস্যার সমাধানের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নীতির দিকে নজর দিতে হবে। পরিবার-বান্ধব আইন প্রণয়নের করতে হবে, পরিবারের উপর অর্থনৈতিক চাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। এর দরুণ জন্মহারের হ্রাস রোধ করা সম্ভব হবে।