লাদাখে ক্রমশই বাড়ছে ভারত-চিনের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ। বিশেষত প্যাংগং সো-এর দক্ষিণে যেভাবে চিনের আগ্রাসনকে রুখেছে ভারত, তারপর নতুন সমীকরণ তৈরী হয়েছে দুই দেশের মধ্যে লাদাখ অচলাবস্থায়। এর মধ্যেই উচ্চপর্যায় আলোচনার টেবিলে ফিরতে চায় দুই দেশই। তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
Shanghai Cooperation Organisation (SCO)-এর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের জন্য এই মুহূর্তে রাশিয়ায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আগে তাঁদের মধ্যে দেখা করার কোনও কথা ছিল না। সূত্রের খবর, লাদাখে অশান্তি শুরু হওয়ার পর এই নিয়ে তৃতীয়বার আলোচনা করার প্রস্তাব দিলেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ভারত যদিও এখনও কোনও উত্তর দেয়নি প্রস্তাবের।
আলোচনার এই প্রস্তাব এল এমন একটি দিনে যখন খুব সরাসরি ভাবে পাকিস্তান-চিনের থেকে সংগঠিত আক্রমণের কথা বললেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। তবে তিনি বলেছেন যে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পুরোদস্তুর প্রস্তুত। পাকিস্তানকে কোনও রকম বেগড়বাই না করার পরামর্শ দেন রাওয়াত।
অন্যদিকে এদিন রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে পাকিস্তানকে সামরিক অস্ত্র দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুতিনের দেশ। ভারতের বিশেষ এই অনুরোধকে মান্যতা দিল রাশিয়া। এদিন প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় কী করে সেই নিয়ে আলোচনা হয়।
আগামী সপ্তাহে রাশিয়ায় যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। তার আগে তিনি বললেন যে ভারত ও চিনকে কোনও ভাবে একটা সমঝোতা করতে হবে ও সেটা কূটনীতির মাধ্যমেই সম্ভব। এদিন নিজের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে চিন নিয়ে অনেক কিছু বলেন তিনি।
জয়শংকর বলেন যে তিনি চিনের বিদেশমন্ত্রীকে অনেক দিন ধরে চেনেন। তাই রাশিয়ায় দেখা হলে ওয়াং ই-কে কি বলবেন তা সহজেই অনুমেয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে কিনা, সেই নিয়ে কিছু বলেননি তিনি। প্রসঙ্গত ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির বিদেশমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠক শুক্রবার। সেখানে কথা হবে এই দুই নেতার। কিন্তু সামনা সামনি দেখা হবে রাশিয়ায়।
ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে জয়শংকর বলেন যে পরিস্থিতি ভালো নয় কিন্তু সমাধান বার করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। দুই দেশ একটা সমঝোতা সূত্র বার করে ফেলে, সেটা খুবই দরকার ও শুধু নিজেদের জন্য নয়, বলে জানান বিদেশমন্ত্রী।
তাঁর নতুন বইয়েও চিন নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি, যদিও এটা অচলাবস্থা শুরু হওয়ার আগে লেখা। সীমান্তে সমস্যা হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার প্রভাব এসে পড়তে বাধ্য বলে জানান জয়শংকর।
তিনি বলেন যে যেভাবে চিনের উত্থান ঘটেছে ও আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গী বদলেছে বিশ্বে ঘটে চলা বিষয়গুলির ওপর, সেটিই দুটি সবচেয়ে বড় বদল শেষ কয়েক দশকে। আমেরিকা আগের মতো আর সারা বিশ্বের অভিভাবক হতে যায় না, ঠারেঠোরে সেটিই বলেন জয়শংকর। একই সঙ্গে দ্রুত উঠে এসেছে চিন বৃহৎ শক্তি হিসাবে যা অনেক হিসেবনিকেশ বদলে দিচ্ছে বলে জানান বিদেশমন্ত্রী।