অ্যাপ দিয়ে সিনেমার টিকিট কিনুন। তাহলেই ঝরঝর করে আপনার অ্যাকাউন্টে ডলারে ক্যাশব্যাক আসবে। খালি রেজিস্টার করার জন্য ২,০০০ টাকা দিতে হবে। তাতে কী, পরে তো ফেরত এসেই যাবে।
এমনই আজব দাবি করে এক চিনা অ্যাপ রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছিল বাংলাদেশে। কয়েক হাজার বাংলাদেশবাসীর থেকে এভাবেই ২,০০০ টাকা করে তুলেছিল সেই অ্যাপ। এরপর ডলারে ক্যাশব্যাক তো দূরের কথা, উল্টে অ্যাকাউন্টই সম্পূর্ণ খালি হয়ে গিয়েছে বহু মানুষের। সাবস্ক্রাইবারদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছে সেই চিনা সংস্থা! ভি নিউজের প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। আরও পড়ুন: Fraud: ঘরে বসেই চাকরি, মোটা বেতন! টোপ আসছে ফোনে,পা দিলেই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা
কিন্তু চিনে বসে তো আর বাংলাদেশে কাজ চালানো যায় না। এর জন্য রাজশাহীর সিরোইল কলোনিতে একটি অফিসও খুলেছিল সেই সংস্থা। কিন্তু জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসার পরে সেই অফিস তালাবন্ধ।
প্রতারিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তাঁরা ই-মুভি(eMovie) নামের এক চাইনিজ অ্যাপ ইনস্টল করেছিলেন। সেটির মাধ্যমেই প্রতারিত হয়েছেন।
সিরোইল কলোনী এলাকার মানিক। তিনিই রাজশাহীতে এই অ্যাপের প্রচার শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপে ন্যূনতম ২,০০০ টাকা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। সেই টাকা দিয়েই বিভিন্ন দেশ থেকে সিনেমার টিকিট কেনা হবে বলে দাবি করেন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
টিকিট কিনলেই সঙ্গে সঙ্গে তার হিসাব নম্বরে মুনাফা যোগ হয়। তবে টিকিট কেনার জন্য টাকাকে(বাংলাদেশি) ডলারে পরিণত করতে হবে। বাংলাদেশি পেমেন্ট অ্যাপ বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠালেই তা ডলার হয়ে ব্যবহারকারীর হিসাব নম্বরে দেখা দেয়। আবার আরও মজার ব্যাপার হল, দাবি করা হয়েছিল যে, যিনি যত বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলবেন, তাঁর মুনাফার হার হবে তত বেশি। আবার অন্যজনকে অনে অ্যাকাউন্ট খোলালেও তার জন্য আরও মুনাফা যোগ হত।
প্রতারিতরা জানিয়েছিলেন, টিকিট কেনার পর মুনাফাও যোগ হয়েছিল। কিন্তু সেটা অ্যাকাউন্টে দেখালেও তা তোলা যাচ্ছিল না। এরপর অ্যাপ প্রতিনিধি মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা তোলা যাবে। সবাইকেই এই গল্প দিয়েছিলেন মানিক, অভিযোগ প্রতারিতদের।
এরপর আসে সেই বহু প্রতীক্ষার দিন, ১২ ফেব্রুয়ারি। ঘুম থেকে উঠেই সবাই ফোন নিয়ে বসে পড়েন। কিন্তু দেখা যায়, টাকা তোলা তো দূর, তাঁদের বিনিয়োগের টাকাটুকুও নেই অ্যাকাউন্টে।
এরপরেই সেদিন সবার ফোনে মেসেজ আসে। ‘মু জি লি’ নামের এক চিনা ব্যক্তির নাম লেখা সেই মেসেজে। তাতে বলা হয়েছে, 'যাঁর যত টাকা অ্যাকাউন্টে মুনাফা জমেছিল, তার ৩০% জমা করতে হবে। সেটা করলেই মুনাফাসহ সম্পূর্ণ টাকা আবার অ্যাকাউন্টে এসে যাবে, তাঁরা পুরোটা তুলে নিতে পারবেন।'
কিন্তু টাকা যদি দিতেই হয়, তবে আবার চাওয়া হবে কেন? এরপরেই সবাই বুঝতে পারেন, এটাই নতুন ফাঁদ। আরও কিছু টাকা এভাবে হাতানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর অক্টোবর থেকে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মফস্বল থেকে গ্রামেগঞ্জে অনেকে এই স্কিমে টাকা ঢালতে শুরু করেন। ভাবেন এভাবেই বিনা পরিশ্রমে ধনী হয়ে যাবেন। আর তা করতে গিয়ে ২,০০০ নয়, আরও বেশি বেশি টাকার স্কিমে টাকা রাখতে শুরু করেন। অনেকেই ১০-১২ হাজার টাকা রেখেছিলেন এতে। সবই খুইয়েছেন।
১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে অ্যাপে অ্যাকাউন্টে কিছু আসছে না। আর সাত রাজার ধন নিয়ে কেটে বেপাত্তা মানিক রতনও। এখন সেই মানিকের খোঁজেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আরও পড়ুন: Cyber crime: মার্কিন প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে সাইবার প্রতারণার অভিযোগ, পুনে থেকে গ্রেফতার ১
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup