'ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য কাজ করতে তৈরি চিন।' এমনই মন্তব্য করলেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ওয়াং বলেন, 'চিন ও ভারত কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। উভয় দেশই সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চিন-ভারত সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়তার জন্য ভারতের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।' প্রসঙ্গত, লাদাখের প্রত্যন্ত গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সৈন্যদের সংঘর্ষের আড়াই বছর পর আজও দুটি দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সংখ্যক জওয়ান মোতায়েন রেখেছে। এরই মাঝে গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াঙে দুই দেশের সেনা জওয়ানরা সংঘাতে জড়ান। এই আবহে চিনা বিদেশমন্ত্রীর এই মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২০ ডিসেম্বরই লাদাখের চুশুলে দুই দেশের সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এর আগেই ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াঙে দুই দেশের সেনা জওয়ানরা সংঘাতে জড়ান। প্রায় ৩০০ সৈন্যকে নিয়ে তাওয়াঙের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে এসেছিল চিন। রাজনাথ সিং তাওয়াং সংঘাত নিয়ে সংসদে বলেন, ‘ভারতের কোনও সৈন্য এই সংঘর্ষে মারা যায়নি এবং কেউ গুরুতর জখম হয়নি। ভারতীয় সামরিক কমান্ডাররা সময়মত হস্তক্ষেপ করায় পিএলএ জওয়ানরা তাদের জায়গায় ফিরে যায়। ঘটনার পরে এলাকার স্থানীয় কমান্ডার ১১ ডিসেম্বর চিনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে একটি পতাকা বৈঠক করেন এবং ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। চিনা পক্ষকে এই ধরনের পদক্ষেপ করতে বারণ করা হয়েছে এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে বলা হয়েছে। বিষয়টি চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়েও তোলা হয়েছে।’
এদিকে গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত ও চিনের মধ্যে মোট ১৬টি বৈঠক হয়েছে। একটি বৈঠক হয়েছিল গালওয়ান সংঘর্ষের আগে। এই বৈঠকগুলির ফলে কোথাও কোথাও শান্তি ফিরেছে, তবে সার্বিক ভাবে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে এখনও সামগ্রিক সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি। এরই মাঝে কয়েক মাস আগে জানা গিয়েছিল, প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন ফিঙ্গার ৮-এর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে একটি বড় সেতু বানাচ্ছে চিন। অপরদিকে অরুণাচলেও আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে চিন। তবে এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যাতে আরও তলানিতে গিয়ে না ঠেকে, তার জন্য দুই দেশের সেনা পর্যায়ের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই দিকেই এখন দুই দেশের সমসংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে। চিনের আর্মরড এবং রকেট রেজিমেন্টগুলি মোতায়েন রয়েছে রুডগ ঘাঁটি, প্যাংগং সোর দক্ষিণে এবং জিনজিয়াং সামরিক অঞ্চলের জিয়াদুল্লাহতে। পিএলএ এয়ার ফোর্স ডেমচোক এবং জিনজিয়াংয়ের হোতান এয়ারবেসে তাদের যুদ্ধবিমান এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করে রেখেছে।