বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > অসংখ্য মসজিদ ধ্বংস করে ১০ লাখ মুসলিমকে বন্দি করেছে চিন, অভিযোগ অজি রিপোর্টে

অসংখ্য মসজিদ ধ্বংস করে ১০ লাখ মুসলিমকে বন্দি করেছে চিন, অভিযোগ অজি রিপোর্টে

কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রায় কয়েক লক্ষ মুসলিমকে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাল অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান।

শিনজিয়াং প্রদেশে বলপূর্বক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক লক্ষ মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন শিবিরে।

আবারও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠলো ড্রাগনের দেশের বিরুদ্ধে। বলপূর্বক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রায় কয়েক লক্ষ মুসলিমকে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাল অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুরদের ওপর চূড়ান্ত নির্যাতন, নির্বিচারে তাদের মানবাধিকার হরণ এবং ডিটেনশন শিবিরে দিনের পর দিন বন্দি রাখার মতো একাধিক অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই উঠেছে জিনপিং সরকারের বিরুদ্ধে। এবার অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর একটি রিপোর্টের সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু মাত্র শিনজিয়াং প্রদেশেই বলপূর্বক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক লক্ষ মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন শিবিরে। শুধু তাই নয়, সরকারি নির্দেশেই সেখানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার মসজিদ ।

সরকার প্রতিষ্ঠিত এবং অজি প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমোদন প্রাপ্ত এই থিঙ্ক ট্যাংক এএসপিআই-এর সদর দফতর অবস্থিত ক্যানবেরায়। মূলত স্যাটেলাইট ইমেজ এবং চিন সরকারের নির্দেশে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুসারে নিজেদের রিপোর্টে এই দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মতে, সাম্প্রতিক কালে শুধু শিনজিয়াং প্রদেশেই প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে সে দেশের সরকার। একাধিক মসজিদ আবার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। তবে এর মধ্যে গত তিন বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে বলে দাবি রিপোর্টে। মূলত উরুমকি এবং কাশগড়ের শহুরে এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে ।

তবে জানা গিয়েছে, সাড়ে আট হাজার মসজিদ ধূলিসাৎ হয়ে গেলেও শিনজিয়াং প্রদেশে এই মুহূর্তে অক্ষত ও ভগ্নপ্রায় মসজিদের সংখ্যা ১৫০০০ এর কাছাকাছি। এএসপিআই-এর রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণ হলে ১৯৬০ সালের সাংস্কৃতিক বিপ্লবোত্তর চিনে উদ্ভূত জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের বিস্ফোরণের পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদের সংখ্যা এত কম। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শিনজিয়াংয়ের যাবতীয় মাজার, কবরস্থান, মসজিদ এবং ইসলামিক তীর্থস্থানের এক তৃতীয়াংশই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি নির্দেশে ।

শুধু তাই নয়, সেখানকার তুর্কি ভাষায় কথা বলা উইঘুর জনজাতি এবং বাকি মুসলমান জনতা মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষের ওপর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষকে বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে দেশের উত্তর পশ্চিম অংশে অবস্থিত ডিটেনশন ক্যাম্পে। নির্বিচারে অত্যাচার ছাড়াও বলপূর্বক তাঁদের ধর্মীয় আচার আচরণ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেখানকার কোনও বৌদ্ধ মন্দির বা গির্জায় বিন্দুমাত্র আঁচড়ও পড়েনি ।

গত বছরেই ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির এর একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনেও ভারতের পড়শি দেশের এই নৃশংসতার কথা উঠে এসেছিল। উল্লিখিত তথ্যের সত্যতা ছাড়াও অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যার দাবি করা হয় ওই রিপোর্টে, যা প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সে দেশের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ।

তবে প্রথম থেকেই এই দাবিকে নস্যাৎ করে আসছে বেজিং । আগের মতোই এবারেও ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাঁদের দাবি শিনজিয়াং প্রদেশেও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন মানুষ । শুক্রবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, ‘ওই রিপোর্টটির কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। চিনের বদনাম করার জন্যই তা তৈরি করা হয়েছে।’

এইমুহূর্তে উক্ত প্রদেশে প্রায় ২৪০০০ মসজিদ রয়েছে বলে দাবি করেন চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি জানান, ‘আমেরিকায় মোট যতগুলি মসজিদ রয়েছে, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মসজিদ রয়েছে শিনজিয়াং প্রদেশে। এমনকি শিনজিয়াং প্রদেশে একজন মুসলিম ব্যক্তি প্রতি গড়ে যত মসজিদ রয়েছে, মুসলিম দেশগুলিতেও তা নেই।’

আগেও একাধিক বার চিনের ডিটেনশন শিবিরের অস্তিত্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছে বেজিং। উগ্রবাদী চিন্তাভাবনা দূর করতে ও দারিদ্র কাটিয়ে উঠতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ওই শিবিরগুলিতে, এমনটাই জানিয়েছে জিনপিং প্রশাসন।

বন্ধ করুন