রেজাউল এইচ লস্কর
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেই ক্ষান্ত ছিল না চিন। পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল বেজিংয়ের মদতপুষ্ট হ্যাকাররা। একটি মার্কিন সংস্থার নয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের কমপক্ষে ১২ টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একাধিবার ঢুকে পড়েছে সেই গোষ্ঠীগুলি।
সাইবার-কর্মসূচির জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নজর রাখা ‘রেকর্ডেড ফিউচার’ নামে ওই সংস্থা জানিয়েছে, ভারতের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদক ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) এবং পাঁচটি আঞ্চলিক লোড ডিসপ্যাচে কেন্দ্রে হানা চালানো হয়। যা বিদ্যুতের জোগান এবং বণ্টনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। যে ১২ টি সংস্থা চিনা গোষ্ঠীগুলির নিশানায় ছিল, তার প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর মে'তে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সংঘাত শুরুর আগেই সম্ভবত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে চিনা মদতপু্ষ্ট গোষ্ঠীগুলির কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভারতের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের একটি বড় অংশেকে নিশানা করার জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই চিনা মদতপু্ষ্ট গোষ্ঠীগুলির একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রবণতা উল্লেখজনকভাবে বেড়েছিল। কয়েকটি হ্যাকিং গোষ্ঠীর সঙ্গে চিনের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এবং চিনা সেনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগসূত্র আছে। তবে শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র নয়, ভারতের একাধিক সরকারি এবং প্রতিরক্ষা সংস্থার নেটওয়ার্কে হানার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
মার্কিন সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালের মে'র সংঘাতের আগে থেকেই প্লাগএক্স ম্যালওয়ার সি২ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহারে উল্লেখজনক বৃদ্ধি নজরে আসে আমাদের। অনেকগুলিই পরবর্তীকালে ভারতীয় সংস্থাহগুলিকে নিশানা করার জন্য যেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। কমপক্ষে ২০২০ সালের মে থেকে প্লাগএক্সের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল ভারতীয় সরকার, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা সংস্থাকে নিশানা করা।’ রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ‘দীর্ঘদিন ধরে চিনা যোগসূত্র থাকা গোষ্ঠীগুলি ব্যাপকভাবে' প্লাগএক্স 'ব্যবহার করে’। গত বছরের বাকি সময়জুড়ে ভারতীয় সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার নেটওয়ার্কে হানা দেওয়ার উপর যে জোরদার নজর ছিল, তা চিহ্নিত করেছেন মার্কিন সংস্থার তদন্তকারীরা।
তবে চিনা হ্যাকাররা ভারতীয় সংস্থার নেটওয়ার্কে ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য আদতে কোনও বিঘ্ন ঘটেছিল, তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি মার্কিন সংস্থা। ওই রিপোর্টে ১৩ অক্টোবর মুম্বইয়ের বড়সড় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের উল্লেখ আছে। যে ক্ষেত্রে রাজ্যের একটি লোড ডিসপ্যাচ কেন্দ্রে ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মহানগরী। মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎমন্ত্রী নীতিন রাউত জানিয়েছিলেন যে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।