কলেজে ভর্তি হওয়ার টাকা ছিল না। তাই, যেকোনও উপায়ে টাকা জোগাড় করতে চেয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু, তার জন্য তিনি যে একের পর এক হোটেল ও সেখানকার মালিক পক্ষকে নিশানা করবেন, সেকথা জানার পর তাজ্জব বনে গিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি, হোটেলের লোকজনকে বোকা বানাতে ওই যুবক যে অসাধু উপায় অবলম্বন করেছিলেন, তাও যথেষ্ট 'অভিনব' বলে মানছে তারা। ইতিমধ্যেই ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঠিক কী? কোথায় ঘটেছে?
ঘটনাটি ঘটেছে চিনে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ধৃত যুবকের বিরুদ্ধে মোট ৬৩টি হোটেলের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, মিথ্যা অভিযোগ তুলে ও ভয় দেখিয়ে ওই যুবক সংশ্লিষ্ট হোটেলগুলিতে প্রথমত, বিনামূল্যে নিজের থাকার ব্যবস্থা করতেন। উপরন্তু, তাদের কাছ থেকে তোলাবাজিও করতেন।
চিনা সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুসারে, ২১ বছরের ওই তরুণের পদবী জিয়াং। তিনি যখনই কোনও হোটেলে চেক ইন করতেন, সেই হোটেলের কর্মীদের এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতারণা করার সমস্ত ব্যবস্থা সঙ্গে নিয়েই সেখানে ঢুকতেন।
তাঁর সঙ্গে থাকত মরা আরশোলা, ব্যবহার করা কন্ডোম, নোংরা চুলের ছেঁড়া গুচ্ছ ইত্যাদি! এরপর তিনি কোনও না কোনওভাবে সেইসব নোংরা আবর্জনা হোটেলের ঘরের কোনও জায়গায় রেখে দিতেন এবং দাবি করতেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আবাসিকদের থাকতে বাধ্য করছে।
এরপর সেই ঘটনা চাউর করে দেওয়ার হুমকি দিতেন জিয়াং। তখন হোটেলের ভাবমূর্তির রক্ষা করতে মরিয়া কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হত। তারা তাঁর জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি 'মুখ বন্ধ রাখার শর্তে' তাঁকে মোটা টাকার খেসারতও দিত!
চিনা সংবাদমাধ্যমকে এই প্রসঙ্গে স্থানীয় এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, '১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে জিয়াং মাঝমধ্য়েই কোনও না কোনও হোটেলে থাকছিলেন। এমনকী, কখনও কখনও তো একদিনেই পরপর তিন-চারটে হোটেলে চেক ইন এবং চেক আউট করেছেন তিনি! সঙ্গে করে মরা আরশোলা, পোকামাকড়, ছেঁড়া চুল আনতেন তিনি। তারপর সেগুলি হোটেলের ঘরে রেখে দিতেন। এরপর হোটেলের কর্মীদের ডেকে ভয় দেখাতেন, এইসব নোংরার ছবি তুলে অনলাইনে পোস্ট করে দেবেন! এতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে যেত। এরপরই তাদের কাছে ক্ষতিপূরণবাবদ বিনামূল্যে থাকা এবং টাকা দাবি করতেন তিনি!'
কীভাবে ধরা পড়লেন জিয়াং?
সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের দাবি, বারবার এমন কাণ্ড ঘটানোর ফলে স্থানীয় হোটেল মালিকদের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে যায়। তাঁরা জানতে পারেন, একজন গ্রাহক এভাবে বহু হোটেলকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
যার জেরে সব শেষে জিয়াং যে হোটেলে ওঠেন, সেখানেও একই কীর্তি করার পর, হোটেলের কর্মীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ আসার পর সবটা পরিষ্কার হয়। তারা ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, তার কাছে এমন অন্তত ২৩টি প্যাকেট ছিল, যার মধ্যে মরা আরশোলা, ব্যবহার করা কন্ডোম-সহ নানা ধরনের নোংরা আবর্জনা যত্ন করে ভরা ছিল!
পুলিশের দাবি, গত বছর থেকে টানা প্রায় ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে ৩০০টিরও বেশি হোটেলে থেকেছেন জিয়াং। তার মধ্যে তাঁর শিকার হতে হয়েছে অন্তত ৬৩টি হোটেলকে। ওই সমস্ত হোটেল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৫,২০০ মার্কিন ডলার তোলা আদায় করেছেন তিনি।