২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় নাগরিকদের ৮৫ হাজারেরও বেশি ভিসা জারি করেছে ভারতে অবস্থিত চিনা দূতাবাস। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে এটাকে। এদিকে ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয়কে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং এর 'উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ' উপভোগ করার বার্তা দিয়েছেন। (আরও পড়ুন: 'শিবের আশীর্বাদে' ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথে,চূড়ান্ত পর্যায়ে বোঝাপড়া)
আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়ে খতম ২ ‘দামী’ মাওবাদী, ঝাড়খণ্ডে ধ্বংস ১১ বাঙ্কার, ৭টি IED
এদিকে ভারত থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা, চিনা নাগরিকদের জন্য ভিসার নিয়ম সহজ করা এবং উভয় দেশে সাংবাদিকদের উপস্থিতি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে চিন। বর্তমানে বেইজিংভিত্তিক মাত্র একজন ভারতীয় সাংবাদিক রয়েছেন এবং নয়াদিল্লিভিত্তিক চিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কোনও প্রতিনিধি নেই। (আরও পড়ুন: ওয়াকফ হিংসার জেরে ঘরছাড়াদের অধিকাংশ এখনও মালদা-ঝাড়খণ্ডে, কেমন আছে মুর্শিদাবাদ?)
ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চিনা রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং বলেন, দুই দেশের উচিত আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলা এবং সীমান্ত বিরোধকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বাধা হতে না দেওয়া। একই সঙ্গে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরও সম্প্রতি বলেছেন, ভারত-চিন সম্পর্ক এখন ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে, তবে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার জন্য এখনও অনেকটা কাজ করতে হবে। (আরও পড়ুন: 'পাশে ২ নার্স…', ভেন্টিলেশনে থাকা বিমানসেবিকাকে যৌন হেনস্থা হাসপাতালে)
বর্তমানে ভারতীয়রা আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই চিনা দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন জানাতে পারেন। এদিকে স্বল্প দিনের জন্যে চিনে যেতে চান, এমন ভারতীয়দের আর বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিতে হবে না। এদিকে চিনা ভিসার রেটও কমানো হয়েছে। এদিকে ভিসার অনুমোদন প্রক্রিয়াও অনেকটা মসৃণ করা হয়েছে। ভারতীয় পর্যটকদের চিনে আকৃষ্ট করার চেষ্টায় এই পদক্ষেপ করেছে বেজিং।
উল্লেখ্য, লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা প্রত্যাহার হয় ২০২৪ সালের দিওয়ালির আগেই। ভারত ও চিন, দুই দেশের সেনাই যৌথ ভাবে সেখানে 'যাচাই পর্ব' চালিয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে যেখানে যার অবস্থান ছিল, প্রায় সেখানেই ফিরে গিয়েছে ভারত ও চিনা সেনার জওয়ানরা। এই আবহে লাদাখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যে সব অস্থায়ী তাঁবু খাটানো হয়েছিল, তা খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং রাশিয়ার কাজান শহরে বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন দু'জনে।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেপস্যাং এবং ডেমচকে ভারতীয় সেনাকে টহলে বাধা দিচ্ছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। তবে রিপোর্টে দাবি করা হয়, এই দুই জায়গায় ভারতীয় সেনার টহলদারির অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে। প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ায় ২০২৪ সালের ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ঘোষণা করে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের টহলের অধিকার মেনে নিয়েছে চিন। এই আবহে প্রায় পাঁচ বছর পরে লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে জট কেটেছে।