রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশি হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর জামিন মামলার রুল সংক্রান্ত শুনানি হতে চলেছে শীঘ্রই। বিডিনিউজ২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইদের ছুটির পরই এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট খুলতেই প্রথম সপ্তাহেই মামলাটি উঠতে পারে এজলাসে। গত ১৯ মার্চ এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেয় বিচারপতি মহম্মদ আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মহম্মদ আলি রেজার বেঞ্চ। এই বিষয়ে চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য জানান, ২৩ এপ্রিল এই রুলের উপর শুনানি হতে পারে। (আরও পড়ুন: ঢাকায় ঘুরল খেলা! সেনা প্রধানের সাথে বৈঠক নিয়ে উলটো দাবি হাসনাতের বেস্ট ফ্রেন্ডের)
আরও পড়ুন: ফের রক্ত ঝরল বালোচিস্তানে, গুলি করে হত্যা ৪ পুলিশ সহ ৮ জনকে
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি এক রুল জারি করে হাইকোর্ট জানতে চেয়েছিল, কেন জামিন দেওয়া হবে না চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে। তার আগে গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় প্রভুর জামিনের আবেদন খারিজ করেছিল চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালত। তারপর গত ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতও তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। এই আবহে গত ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন চিন্ময় প্রভু।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হাসিনা বিরোধী ঢেউয়ের বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিল ভারত, বললেন জয়শংকর
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় সব মিলিয়ে ২১ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করারও অভিযোগ উঠেছিল।
উল্লেখ্য, হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। ২০২৪ সালের অগস্ট থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পরও সেই দেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার থামেনি। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছিল। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছিল। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাম্প্রতিক সময়ে।