শিক্ষাগত যোগ্যতা - দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ। আর সেটুকু বিদ্যে সম্বল করেই করছিলেন ডাক্তারি! তাও আবার গত ৩ বছর ধরে! কীর্তিমান সেই হাতুড়েকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল - মহারাষ্ট্রের পন্ধরপুর।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ধৃত ব্যক্তির নাম - দত্তাত্রেয় সদাশিব পাওয়ার। এখনও পর্যন্ত তিনি অসংখ্য গুরুতর অসুস্থ রোগীরও 'চিকিৎসা' করেছেন বলে দাবি! যাঁদের মধ্য়ে ডায়াবেটিসের রোগী যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন হাড়ের অসুখে ভোগা মানুষজন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও দত্তাত্রেয় তাঁদের অ্য়ালোপ্যাথি ওষুধ 'প্রেসক্রাইব' করতেন!
নিউজ এইটিন এবং মাত্রুভূমি ডট কমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যে তথ্য উঠে এসেছে, তা এককথায় ভয়ঙ্কর। ডাক্তারখানা খুলে বসার আগে দত্তাত্রেয় সাতারা এলাকায় চারদিনের একটি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। আর সেই 'জ্ঞান' সম্বল করেই গত তিন বছর ধরে 'ডাক্তারি' করছিলেন তিনি।
দত্তাত্রেয়র কোনও মেডিক্যাল ডিগ্রি নেই। স্বাভাবিকভাবেই কোনও লাইসেন্সও নেই। অথচ, তিনি রোগী দেখতে ভিজিট নিতেন ৫০০ টাকা করে! সূত্রের দাবি, প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী দেখতেন তিনি! অর্থাৎ, প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা রোজগার করতেন।
তবে, শুধুমাত্র পন্ধরপুরে 'প্র্যাকটিস' করেই ক্ষান্ত হননি দত্তাত্রেয়। নিজের রোজগার বাড়াতে শেগাঁও এলাকাতেও একই ব্যবসা ফেঁদে বসেন তিনি। শুধু তাই নয়। দুই জায়গাতেই তাঁর ডাক্তারখানার ভারী নামডাক ছিল!
বহু মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে নিয়মিত তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে আসতেন। তাঁরা জানতেনও না যে তাঁদের 'ডাক্তারবাবু' আদতে দশম শ্রেণী পাশ করা একজন সাধারণ লোক। যাঁর চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই।
তবে, বেশি দিন নিজেকে আর আড়াল করতে পারলেন না দত্তাত্রেয়। তাঁর চিকিৎসার ধরন দেখে কিছু রোগীর সন্দেহ হয়। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হন। কোনওভাবে সেই খবর পৌঁছয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এরপরই স্থানীয় থানা ও পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায় স্বাস্থ্য দফতর।
সেই অভিযানে নিশ্চিতভাবে সামনে আসে, ডাক্তার হওয়া দূরে থাক। দত্তাত্রেয়র সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতাও একেবারই ন্যূনতম। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এবং তাঁর ডাক্তারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর আরও কঠোরভাবে বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তারা দত্তাত্রেয়র সমস্ত কীর্তিকলাপ এবং গতিবিধি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখে। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই এলাকায় আরও এমন কোনও হাতুড়ে রয়েছেন কিনা, সেই খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।