বাড়িতে নেই টিভি অথবা স্মার্টফোন। অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারার হতাশায় আত্মঘাতী হল ১৪ বছরের স্কুলছাত্রী।
করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউনে ঘরবন্দি পড়ুয়াদের সুবিধায় কেরালায় শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। পড়াশোনার এই নতুন মাধ্যম ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দেখা দিয়েছে। কিন্তু তারই পাশাপাশি রয়ে গিয়েছে বিষাদের কালো ছায়া।
গত সোমবার দুপুর থেকে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় মালাপ্পুরমের বালানচেরি এলাকার ছাত্রী বছর চোদ্দর দেবিকা। পরে বাড়ির কাছে ফাঁকা জমিতে পাওয়া যায় কিশোরীর পুড়ে যাওয়া দেহ। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের খালি বোতল উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। জানা গিয়েছে, নিজের নোটখাতার পিছনে দেবিকা লিখে রেখেছিল, ‘মৃত্যু, মৃত্যু,মৃত্যু...’। দেহটি ময়না তদন্তের জন্য মাঞ্জেরি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ইরিমবিলিয়ামের সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী দেবিকা বরাবরই মেধাবী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিল। লকডাউনে স্কুলের তরফে আনলাইন ক্লাস চালু হলেও তাতে সে হাজিরা দিতে পারেনি। লকডাউনের কারণে দেবিকার বাবা পেশায় খেতমজুর পি বালাকৃষ্ণণ বে-রোজগেরে হয়ে পড়েন। তার ফলে বাড়ির একমাত্র টিভি-টি গত তিন মাস ধরে অচল রয়েছে। দরিদ্র দলিত পরিবারটিতে কোনও স্মার্টফোনও নেই।
নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারতে স্বান্তনা দেন স্থানীয় বিধায়ক আবিদ হুসেন থাংগাল। পরে তিনি জানান, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই সরকার অনলাইন ক্লাস শুরু করে দেয়। মালাপ্পুরম ও ওয়াইয়ানাডে কমপক্ষে ২০,০০০ পড়ুয়ার টিভি বা স্মার্টফোন নেই। এর ওপর অনলাইন ক্লাস নিয়ে সরকারি প্রচারের ঠেলায় এই সমস্ত পড়ুয়ারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার থেকে কেরালায় অনলাইন ক্লাস চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি বলেন, নতুন পঠনপাঠন প্রকল্প শিক্ষাদানে আমূল পরিবর্তন আনবে।
এর আগে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন শিক্ষা আন্দোলনকারীরা। সমস্ত পড়ুয়ার বাড়িতে ইন্টারনেট ও টিভি যোগাযোগের ব্যবস্থা করার আগে এই পরিকল্পনা চালু করতে তাঁরা নিষেধ করেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি প্রশাসন।
দলিত স্কুলছাত্রীরস মৃত্যুতে জেলা শিক্ষা আধিকারিকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন কেরালার শিক্ষামন্ত্রী সি রবীন্দ্রনাথ। অন্য দিকে, উপজাতি-সহ কোন কোন পরিবারে টিভি বা স্মার্টফোন নেই, সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াইয়ানাডের কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।