বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অশান্তির মধ্যেই মণিপুরের ইম্ফল পশ্চিম জেলা থেকে ২৯ জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হল! সোমবার এমনটাই দাবি করেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তিনি জানিয়েছেন, ধৃতদের কাছ থেকে ভারতীয়দের অন্যতম প্রধান সচিত্র পরিচয়পত্র আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে! সেগুলি অসম থেকে ইস্যু করা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে, ওই ২৯ জন মায়াং ইম্ফল বেঙ্গুন এলাকায় একটি বেকারি কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকেই তাঁদের পাকড়াও করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ধৃতদের কাছ থেকে অসমের আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা মণিপুর সরকারের ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) নীতি লঙ্ঘন করেছেন।'
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, যেহেতু ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে অসমের উল্লেখ রয়েছে, তাই তাঁদের অসম প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। শুধু তাই নয়, রাজস্ব দফতরের যে কর্মী ও আধিকারিকরা ওই ২৯ জনের নামে আইএলপি ইস্যু করেছিলেন, তাঁদের সাসপেন্ড করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর কথায়, 'কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরের মানুষকে আইএলপি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তার একটাই লক্ষ্য, তা হল - রাজ্যবাসীকে সুরক্ষা প্রদান করা। কিন্তু, যাঁদের সেই কাজ করতে হবে, তাঁরাই যদি এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে এর ফল কী হবে?...'
'...আমাদের আশঙ্কা, খুব সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে মণিপুরে ঢুকেছেন কিছু মানুষ।'
এদিকে, মণিপুরের কাংপোকপি জেলার লেইমাখংয়ে অবস্থিত একটি সেনা ছাউনি থেকে লাইশ্রাম কমলবাবু সিং নামে এক ব্যক্তি হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে যান বলে দাবি সূত্রের। ওই ব্যক্তি মেইতি জনজাতিভুক্ত।
সোমবার সেই বিষয়টি নিয়েও সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি জানান, 'নিরপত্তাবাহিনী তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। গতকাল, সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার নিয়ে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়েছিল। তাঁর খোঁজে তল্লাশি দলকেও কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।'
এদিকে, এই ঘটনার জেরে অন্য মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন নিখোঁজ ওই ব্যক্তির স্ত্রী আকোইজাম নিঙ্গোল লাইশ্রাম ওংবি বেলারানি। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল থেকেই তাঁর স্বামীর মোবাইল 'আনরিচেবল' হয়ে আছে। ফলত, তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন বেলারানি।
কমলবাবু আদতে অসমের কাছার জেলার বাসিন্দা হলেও তিনি লয়ট্যাং খুনউয়ে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে থাকতেন এবং সংশ্লিষ্ট সেনাছাউনিতে কাজ করতেন। অভিযোগ, সেখান থেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি।
এই ঘটনার জেরে ইম্ফল উপত্যকায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয়েছে। আমজনতা নিখোঁজ ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে আনার দাবি তুলছে। অন্যদিকে সেনার বক্তব্য, তারা ওই ব্যক্তির সন্ধানে লাগাতার তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। সেনার তরফে বিবৃতি জারি করে এমনই দাবি করা হয়েছে।