অসমের বেআইনি খনিতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসল সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আর কখনও যাতে এমন অঘটন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বেআইনি খনিমুখগুলি 'সিল' করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হল।
অসম সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই অভিযান শুরু করেছে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল)। সূত্রের খবর, শনিবার অসমের তিনসুকিয়া জেলায় অন্তত ১৩টি 'ব়্য়াট হোল' বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই 'ব়্যাট হোল' হল বেআইনিভাবে খনিতে ঢোকার গোপন সুরঙ্গ। যার মধ্য়ে দিয়ে খনিতে ঢুকে কয়লা চুরি করে আবার সেই পথেই ফিরে যায় চোরেরা। কিন্তু, এই কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক। যেকোনও সময় সুরঙ্গ ধসে প্রাণ যেতে পারে। তবুও পেটের টানে এমন কাজ করেন বহু মানুষ।
তিনসুকিয়ার এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রীতম গগৈ এই প্রসঙ্গে বলেন, শনিবার সকালেই পুলিশ ওই ব়্যাট হোলগুলি চিহ্নিত করে। পরে সেগুলি 'সিল' করে দেওয়া হয়।
প্রীতম বলেন, 'আপাতত আমরা ১৩টি ব়্য়াট হোল সিল করে দিয়েছি এবং এই সমস্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছি। ধৃত ব্যক্তিরা বেআইনি খনির ভিতরে ঢুকে কয়লা চুরি করছিলেন। এছাড়াও, আমরা একটি এক্সক্যাভেটর এবং বেশ কিছু অন্য যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছি।'
প্রীতম জানিয়েছেন, ওই ব়্যাট হোলগুলি তিনসুকিয়ার মার্গারিটা এলাকায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কয়লা চোরের দলবল কোল ইন্ডিয়ার বাতিল কার্যালয়গুলি ব্যবহার করেই নিজেদের কারবার চালাচ্ছিল!
প্রীতম বলেন, 'ওঁরা ওই অফিসগুলি ব্যবহার করছিলেন। এমনকী সেখানে কোনওভাবে বিদ্যুতের সংযোগ পর্যন্ত নিয়েছিলেন। আমরা ওই অফিসগুলিও সিল করে দিয়েছি। এবং সমস্ত ব়্যাট হোল নষ্ট করে দিয়েছি। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের সকলকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।'
তিনসুকিয়ার পুলিশ সুপার গৌরব অভিজিৎ দিলীপ জানিয়েছেন, মূলত কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেই এই অভিযান চালানো হয়েছিল। পুলিশ তাতে সহযোগিতা করেছে। নর্থ-ইস্টার্ন কোলফিল্ডস এবং অসম বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার প্রতিনিধিরাও এই অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন।
যদিও শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুলিশের তরফ থেকে ধৃত ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তাদের বক্তব্য, যেহেতু ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে, তাই ধৃতদের পরিচয় প্রকাশ্য়ে আনা যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি অসমের ডিমা হাছাও জেলায় বেআইনি খনি থেকে কয়লা চুরি করার সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায়। জলে ডুবে যাওয়া খনিতে আটকে পড়েন ন'জন শ্রমিক। পরে তাঁদের মধ্য়ে চারজনের দেহ উদ্ধার করা হয়। বাকি পাঁচজনের আজও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, ডিমা হাছাওয়ের উমরাংসো এলাকায় ২২০টিরও বেশি ব়্যাট হোল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। সরকার শীঘ্রই সেগুলি সিল করে দেবে।