দীনেশ বোথরা ও সেঁজুতি সেনগুপ্ত
রাজস্থানের যোধপুর পুলিশ শনিবার সুরসাগর এলাকায় দুটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৫১ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজারাম মোড়ের কাছে একটি ঈদগাহে দুটি নতুন গেট বসানো নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, 'গত কয়েকদিন ধরে এই বিরোধ চলছে। যোধপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেন্দ্র সিং বলেন, শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ঈদগাহ থেকে ১০-১৫ জন স্থানীয় লোকের একটি দল আরেকটি দলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে।
উত্তেজনা বাড়তে থাকলে উত্তেজিত জনতা স্থানীয় একটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একটি পুলিশ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদগাহের পেছনের দেয়ালে নতুন দুটি গেট স্থাপন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিরোধ চলছিল, কারণ স্থানীয়রা অভিযোগ করেছিলেন যে তাদের নির্মাণে স্থানীয় পৌরসভার আইনি প্রটোকল অনুসরণ করা হয়নি।
শুক্রবার রাতে ঈদগাহের গেট খুলতে গেলে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখান। তিনি আরও জানান, পুলিশ ও স্থানীয় পৌরসভার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে উভয় গ্রুপের পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বিষয়টি উভয় গ্রুপের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়।
যোধপুর পুলিশ কমিশনার রাজেন্দ্র সিং বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
তিনি বলেছিলেন যে ১০-১৫ জনের একটি দল হঠাৎ করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য গ্রুপ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় চৌপাসনি হাউজিং বোর্ড থানার ইন্সপেক্টর নীতিন দাভে এবং কনস্টেবল শয়তান সিং-সহ দুই পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। ডেভের ঘাড়ে গুরুতর আঘাত লাগে এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সিংকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসিপি) (পশ্চিম) শরদ চৌধুরী জানিয়েছেন, পাথর ছোড়ার ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা স্থানীয় দোকান, বাড়ি এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। 'একদল লোকের ঝাড়ুর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দমকল বাহিনী শেষ পর্যন্ত আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও পাশের একটি বাড়ির গেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি আরও জানান, সুভাষ চক এলাকার কাছে পার্ক করা একটি ট্র্যাক্টরেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং একটি পুলিশ ভ্যান সম্পূর্ণ ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হিংসার ঘটনার পর পুলিশ তৎপর হয়েছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আমাদের লাঠিচার্জ করে মৃদু শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। ভাইপারিয়োঁ কা মহল্লা লক্ষ্য করে প্রায় চার থেকে পাঁচ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কমিশনার সিং গভীর রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরসাগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করেন।
শনিবার যোধপুর পূর্বের ডিসিপি অলোক শ্রীবাস্তব সুরসাগর কিছু অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন, শান্তি ফিরিয়ে আনতে রাজস্থান আর্মড কনস্টাবুলারি (আরএসি) বাহিনীর সাথে একটি অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় লাগাতার টহল দিচ্ছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত ৫১ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করা সকলকে আটক করার জন্য তদন্ত চলছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা নিষ্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে উত্তেজনা ছড়াল তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।
পাথর ছোড়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গা), ১৪৮ (অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা করে মৃত্যুর সম্ভাবনা), ১৪৯ (বেআইনি জমায়েত), ৩৩২ (স্বেচ্ছায় কোনও সরকারি কর্মীর কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার জন্য ক্ষতি করা) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রামনবমীর শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার সময় হঠাৎ পাথর ছোড়ার ঘটনা বেড়ে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে বহু লোক আহত হয়। ২০২২ সালের জুনে একই এলাকায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ছোটখাটো বিরোধের জেরে এ ধরনের আরেকটি ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছিল। আমরা সমস্ত দিক তদন্ত করব এবং যারা পরিস্থিতি উস্কে দিয়েছে তাদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা যোধপুরের ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস। যারা যোধপুর শহরের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "যে সমাজবিরোধীরা গতকালের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বরদাস্ত করা হবে না। আমি সমস্ত সম্প্রদায়কে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। শান্তি বিঘ্নিত করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে দোষী ও সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী জোগারাম প্যাটেল।