'রাত ১২.৩০-এ কী করে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোল ছাত্রী?' দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণ-কাণ্ডে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদের স্টুডেন্টদের দেখভাল (টেক কেয়ার) করার।' এদিকে যখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মেয়েদের নিয়ে মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে খোঁচা দিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্র কর্মী মারিয়া করিনা মাচাদোর ভূয়সী প্রশংসা করলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশায় জল ঢেলে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন মারিয়া করিনা মাচাদো। ফলে স্বভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। এই আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিশানা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করেছেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা এবং আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। এক্স বার্তায় নিজস্ব উক্তি তুলে ধরে কংগ্রেস সাংসদ লিখেছেন,
'ট্রাম্প: যদি আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দেওয়া হয়, তাহলে আমি দুনিয়া মেয়ে তেহেলক মাচা দুঙ্গা...
নোবেল কমিটি: মাচাদো।'
কংগ্রেস নেতার রসিকতা করেই ভেনেজুয়েলার নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোর নামের সঙ্গে হিন্দি প্রবাদ 'মাচা দুঙ্গা' যুক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মারিয়া করিনা। সে দেশের বিরোধী দলগুলির মধ্যে একসময় ব্যাপক বিভাজন ছিল। তবে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের দাবিতে বিরোধী শক্তি মারিয়া করিনার নেতৃত্বে একযোগে শামিল হয়েছিল। ৫৮ বছর বয়সি শিল্প প্রকৌশলী মারিয়া করিনা ২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী জোটের মনোনীত প্রার্থী হন। কিন্তু সে দর্শের শাসক গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে আদালতের মাধ্যমে তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। যে কারণে ২০১৩ সাল থেকে সে দেশে ক্ষমতায় থাকা নিকোলাম মাদুরোকে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি তিনি। মারিয়া ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে তিনি বিরোধী প্রেসিডেন্টর প্রাইমারিতে প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু হেনরিক ক্যাপ্রিলেসের কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালের ভেনেজুয়েলার বিক্ষোভের সময় তিনি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখেন।
আরও পড়ুন-ভারতে AI বিপ্লব! আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান, রিপোর্ট নীতি আয়োগের
অন্যদিকে, গত কয়েক মাস ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন তিনি। পাশপাশি, ট্রাম্প জনসমক্ষে ঘোষণা করা যে তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে তিনি আহ্বানও জানিয়েছেন এই পুরস্কার তাঁকে দেওার জন্য। পুরস্কার ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন আগেই ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিশ্চিত হওয়ায় চাপ বাড়ে নরওয়ের নোবেল কমিটির উপর। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের ভাগ্যে সিঁকে ছিঁড়লো না। এরপরেই নোবেল কমিটির তীব্র সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তে এই পুরস্কারের জন্য তদবির করেছিলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেত্রী মারিয়া এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার ভূমিকা তুলে ধরেছিলেন তিনি। নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে যে তারা শান্তির উপরে রাজনীতিকে স্থান দেয়। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং এক্সে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চুক্তি, যুদ্ধের অবসান এবং জীবন বাঁচাতে কাজ চালিয়ে যাবেন। তারমধ্যে মানবতাবাদী হৃদয় রয়েছে এবং তার মতো কেউ কখনও তার ইচ্ছাশক্তির জোরে এমন পাহাড় সরানোর মতো কাজ করতে পারবে না।’
আরও পড়ুন-শুল্ক যুদ্ধ-ভিসা জট অতীত! গাজার শান্তি সম্মেলনে 'বন্ধু'-কে আমন্ত্রণ ট্রাম্পের, কী বললেন PM?
তবে মারিয়া তার নোবেল শান্তি পুরস্কারটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন। তার কারণও ব্যক্ত করেছেন। মারিয়া বলেন,'ভেনেজুয়েলার সংগ্রাম স্বীকৃতি পেয়েছে। তা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সহায়তা করবে। আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের উপর ভরসা বেড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, মার্কিন জনগণ, ল্যাটিন আমেরিকার মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলির। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাঁরা আমাদের বন্ধু। এই চেষ্টায় পাশে পাওয়ার জন্য ভেনেজুয়েলার জনগণ এবং রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি।'