আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী। ২৩ জানুয়ারি দেশনায়ককে শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী আজ নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা জানাতে পোস্ট করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তাতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘মৃত্যুর তারিখ’ উল্লেখ রয়েছে। তাতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা দেশে। নেতাজির নিজের তৈরি দল ফরওয়ার্ড ব্লক এই ঘটনায় রাহুল গান্ধীকে ‘অর্বাচীন’ বলে আক্রমণ করেছে। বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসও রাহুলের সমালোচনা করেছে।
এদিকে নেতাজির জন্মদিন বিতর্কিত পোস্ট করে গোটা দেশে তুমুল সমালোচিত হলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। কেন এই বিতর্ক? বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘মহান বিপ্লবী, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুজিকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। নেতাজির নেতৃত্ব, সাহস এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য তাঁর সংগ্রাম, সহনশীলতা এখনও প্রত্যেক ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করে। ভারত মাতার অমর সন্তানকে আমার বিনম্র প্রণাম! জয় হিন্দ।’ এই পোস্টের শেষে জন্ম তারিখের পাশাপাশি মৃত্যুদিন হিসেবে লেখা রয়েছে ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫। বিতর্ক শুরু এখান থেকেই।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধী এদিন নেতাজির একটি ছবিও পোস্ট করেছেন। সেখনে জন্মের (২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৭) পাশাপাশি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন হিসাবে ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ তারিখকে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যকে অস্বীকার করা হয়েছে কংগ্রেস সাংসদের পোস্টে। এই তারিখ তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর সেই বিতর্কিত তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। যেখানে মুখার্জি কমিশনে সাফ খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল ওই মৃত্যুর তারিখ। তাহলে রাহুল গান্ধী এই তারিখ দিলেন কেন? জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে এখন এই প্রশ্নই বড় হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: তরুণীর নলিকাটা দেহ থেকে গলগল করে বের হচ্ছে রক্ত, হরিদেবপুরে হাড়হিম করা ঘটনা
এছাড়া রাহুল গান্ধীর মতো নেতা, যিনি এখন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তিনি এমন পোস্ট করার জেরে সমালোচনাও চরমে উঠেছে। এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘লোকসভার বিরোধী দলনেতা নিজের পোস্টে যেভাবে নেতাজির মৃত্যুদিন ঘোষণা করেছেন সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে শেষ যে কমিশন মত দিয়েছে, তাদের মতে ওই দিনটা নেতাজির মৃত্যুদিন নয়। তার পরেও বিরোধী দলনেতার মতো পদে বসে থাকা ব্যক্তি যে কাজ করলেন সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দেশের কাছে রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ আর ইন্ডিয়া জোটে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘নেতাজি সম্পর্কে অন্তর্ধান রহস্য কথাটা ব্যবহার করা হয়। তাইহোকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনা ওই দিন আদৌ ঘটেছিল কিনা ও তাতে আদৌ কারও মৃত্যু হয়েছিল কিনা সেটার কোনও প্রমাণ নেই। নেতাজির মৃত্যুদিন বলে দেওয়া কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’ আর ফরওয়ার্ড ব্লক চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘নেতাজির মৃত্যুদিন সম্পর্কে কংগ্রেস আগেও বিতর্ক তৈরি করেছে। আবার করল। রাহুল গান্ধী অর্বাচীনের মতো মন্তব্য করেছেন।’