হরিয়ানায় হার মেনে নিতে পারছে না কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনে এই পরাজয় কোনও অবস্থাতেই 'গ্রহণযোগ্য নয়'। এবং এর জন্য মূলত ইভিএম কারচুপিকেই দায়ী করছে দলীয় নেতৃত্ব। যদিও, এখনই এ নিয়ে সুর চড়ানো হবে না বলে ঠিক করা হয়েছে।
এর বদলে, দলের অন্দরের কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা, বিশেষ হরিয়ানা নির্বাচনে পরাজয়ের নেপথ্যে কংগ্রেসের অন্তর্কলহ কতটা দায়ী, তা বোঝার চেষ্টা করছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
হরিয়ানায় দলের হার নিয়ে কাটাছেঁড়া করার জন্য বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। সেই বৈঠকে দলের অন্য নেতা, নেত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্থির হয়, এবারের হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারাতে যে ইভিএম কারচুপি করা হয়েছিল, সেই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত, এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিবাদ জানানো হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত অন্তত এমনটাই দাবি করা হচ্ছে।
এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে খাড়্গের দফতর থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ইভিএম কারচুপির অসংখ্য অভিযোগ দলের কাছে এসেছে। সেই অভিযোগগুলি যাচাই করে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একটি টেকনিক্যাল টিমকে।
এই টিমের সদস্যরা প্রযুক্তির সাহায্যে প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করে দেখবেন। ইভিএম কারচুপি করেই কংগ্রেসকে হারানো হয়েছে কিনা, গুরুত্ব সহকারে তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। তারপর, ওই টিমের সদস্যরা যে রিপোর্ট দলের কাছে জমা দেবেন, তারই ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
সূত্রের দাবি, এসবের মধ্যেই ঘরের কোন্দল নিয়েও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস হুডা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারী শৈলজার অনুগামীরা এই হারের জন্য একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
তথ্য বলছে, এই বিবাদ মোটেও ভালোভাবে নেননি কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। দলীয় নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর কঠোর বার্তা, এখানে দলের স্বার্থ সর্বোচ্চ। তাই, নিজেদের মধ্যে যেসমস্ত ঝামেলা রয়েছে, তা অবিলম্বে মিটিয়ে ফেলতে হবে।
কংগ্রেস হাইকম্য়ান্ড মনে করছে, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে দলের পরাজিত হওয়ার অন্যতম কারণ অন্তর্কলহ।
সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে হুডা ও তাঁর অনুগামী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উদয় ভান এবং অন্যদিকে, কুমারী শৈলজা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রণদীপ সিং সুরজেওয়ালাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বৈঠকে যাতে কোনও অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্যই নাকি এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে!
বৈঠকে স্থির করা হয়েছে, এই হারের কারণ জানতে একেবারে বুথস্তরে 'তদন্ত' চালাবে কংগ্রেস। এর জন্য পরাজিত হওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে কেন তাঁদের পরাজিত হতে হল, সেটা তাঁদেরই জানাতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন। তিনি বলেন, 'আপনারা সকলেই জানেন, বুথ ফেরত সমীক্ষা এবং ওপিনিয়ন পোলের পর্যবেক্ষণ অনুসারে এই ফলাফল কিছুতেই মানা যায় না। বুথ ফেরত সমীক্ষা এবং প্রকৃত ফলাফলের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আমরা এর সম্ভাব্য কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি।'
হারের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে অন্তর্কলহ - অনেক কিছুই এর জন্য দায়ী হতে পারে। আমরা সমস্ত সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা করেছি এবং আগামী দিনেও এ নিয়ে কথাবার্তা চলবে।'