কানাডার পার্লামেন্টে এত বছর ধরে তারা যে দিওয়ালির উৎসব পালন করত, এবছর তা বাতিল করে দিয়েছে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি। তাদের এমন আচরণে বেজায় চটেছেন কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা।
এই প্রেক্ষাপটে স্থির করা হয়েছে, দিওয়ালির ওই অনুষ্ঠান হবে। তবে, তার দায়িত্ব নিয়েছেন ক্ষমতাসীন লিবারাল পার্টির একজন এমপি।
উল্লেখ্য, কানাডার পার্লামেন্টে দিওয়ালি পালন করা হচ্ছে ১৯৯৮ সাল থেকে। প্রথমবার সেই আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন প্রয়াত কনজারভেটিভ এমপি ডেরেক ওবেরয়। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এরপর থেকে পার্লামেন্ট হিলে সেই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন আরও এক কনজারভেটিভ এমপি টড দোহেত্রি। যদিও সম্প্রতি জানা যায়, এবার আর কনজারভেটিভ পার্টি পার্লামেন্টে দিওয়ালি পালন করবে না।
অথচ, গত বছরও পার্লামেন্ট হিলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোলিয়েভরে। কিন্তু, কেন হঠাৎ এই অবস্থান বদল করা হল, সেই বিষয়ে কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
যদিও পিয়েরে পোলিয়েভরের নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে নানা মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে।
এই অবস্থায় লিবারাল পার্টির এমপি চন্দ্র আচার্য স্থির করেছেন, তিনিই ক্য়ালগ্যারিতে অবস্থিত ওবেরয় ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কানাডার পার্লামেন্টে দিওয়ালির অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন।
মঙ্গলবার এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন ওবেরয় ফাউন্ডেশনের কর্ত্রী (প্রয়াত এমপি-র মেয়ে) প্রীতি ওবেরয়।
প্রীতি জানান, এবছরও পার্লামেন্ট হিলে দিওয়ালি পালিত হবে। তাঁর বাবা প্রয়াত দীপক ওবেরয়ের স্মৃতিচারণ করে প্রীতি বলেন,তাঁর বাবার কাছে এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান ছিল না।
কারণ, দীপক রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে সকল মানুষের কাছে পৌঁছতে পারতেন। তাঁর সেই ক্ষমতা ছিল। এবং তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রীতি-রেওয়াজ পালনের মধ্যে দিয়েই মানবতার উদযাপন করতেন।
এই প্রসঙ্গে চন্দ্র আচার্যের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রীতি। বলেন, 'চন্দ্র আচার্য প্রথম থেকেই এই অনুষ্ঠানের সমর্থক ছিলেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই তিনি এটা করতেন। তাই, এবার তিনি যখন পার্লামেন্ট হিলে দিওয়ালির আয়োজন করবেন, সেটা আমাদের পরিবারের কাছে গর্বের বিষয় হবে।'
এর পাশাপাশি, তাঁর বাবার মৃত্যর পর পার্লামেন্টে দিওয়ালির আয়োজন করার জন্য কনজারভেটিভ এমপি দোহেত্রিকেও ধন্যবাদ জানান প্রীতি। তিনি বলেন, 'যদিও তিনি (দোহেত্রী) এবছর দিওয়ালির অনুষ্ঠান করছেন না এবং সেটা আমাদের কাছে বেদনার বিষয়, তবুও তিনি এবং তাঁর সহকারীরা যেভাবে আমার বাবার ঐতিহ্য অব্যাহত রাখতে গত কয়েক বছর সহযোগিতা করেছিলেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।'
এদিকে, এই ঘটনায় কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা কানাডা সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনকেই এর জন্য দায়ী করছেন।
বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পোলিয়েভরেকে এ নিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন স্থানীয় ভারতীয় সংগঠনের সভাপতি শিব ভাস্কর। এমন সিদ্ধান্তের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্য়ে ক্ষমা প্রার্থনা করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।