সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের দাওয়াই দিয়ে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যম। আর এবার নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করতে অনিচ্ছার জন্য সরকারি প্রকল্পের দিকে আঙুল তুললেন। তিনি বলেছেন, যে সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং সুযোগ সুবিধার কারণে নির্মাণ শ্রমিকরা অন্যত্র গিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক নন। তাঁর মতে, কাজের সন্ধানে বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ অভিবাসন করছে। কিন্তু, ভারতের মানুষ কাজের জন্য অন্য কোথাও যেতে প্রস্তুত নয়। আর তারফলে জাতির বিকাশের জন্য রাস্তাঘাট এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো পরিকাঠামো নির্মাণ শ্রমিকের ঘাটতির কারণে কঠিন হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: '৯০ ঘণ্টা কাজ' বিতর্কে L&T চেয়ারম্যানকে সমর্থন, মোদীর আস্থাভাজন বললেন…
চেন্নাইয়ে সিআইআই সাউথ গ্লোবাল লিংকেজেস সামিটে যোগ দেন সুব্রহ্মণ্যম। সেখানে তিনি বক্তৃতা দিতে গিয়ে একথা বলেন। সুব্রহ্মণ্যম আরও বলেন, ‘আমাদের ৪ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় এবং বছরে তিন থেকে চারবার কর্মী ছাঁটাই করতে হয়। তাই ৪ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগের জন্য আমরা প্রায় ৬০ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করি। তিনি কোম্পানির সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে আরও বলেন, ‘শ্রমিক নিয়োগের পদ্ধতি অনেক বদলে গিয়েছে। নতুন সাইটের জন্য কাঠমিস্ত্রি নিয়োগ করতে কোম্পানিটি অতীতে কাজ করা কাঠমিস্ত্রিদের তালিকা পাঠায়। এরপর শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা কাজ করবেন কিনা। প্রতি বছর ১.৬ মিলিয়ন লোককে একত্রিত করা হবে। তাই আমরা এইচআর ফর লেবার নামে একটি পৃথক বিভাগ তৈরি করেছি যা কোম্পানিতে নেই কিন্তু এটি রয়েছে। কখনও কখনও আমি সেখানে বসে থাকি।
শ্রমিকরা কেন কাজে অনীহা প্রকাশ করছেন তার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন এলঅ্যান্ডটি-র চেয়ারম্যান। তাঁর মতে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- জন ধন অ্যাকাউন্ট, সরাসরি বেনিফিট ট্রান্সফার, গরীব কল্যাণ যোজনা, মনরেগার মতো প্রকল্পের কারণে মানুষ গ্রামীণ এলাকায় আরামে বসবাস করতে পছন্দ করছেন। সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মানুষ কাজে আসতে ইচ্ছুক নন। কারণ জন ধন, সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর, গরীব কল্যাণ যোজনা, মনরেগার মতো প্রকল্প রয়েছে।’ এর কারণে তাঁরা গ্রামাঞ্চল থেকে দূরে সরে যেতে চায় না এবং আরাম পছন্দ করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং পদের ক্ষেত্রেও একই রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে তিনি জানান। এপ্রসঙ্গে অতীতের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘১৯৮৩ সালে যখন আমি এলএন্ডটি-তে যোগদান করি তখন আমার বস বলেছিলেন, যদি তুমি চেন্নাই থেকে এসে থাকো, তাহলে তুমি দিল্লিতে যাও এবং কাজ কর। তবে আজ যদি আমি চেন্নাই থেকে একজন লোককে নিয়ে যাই এবং তাকে যদি দিল্লিতে গিয়ে কাজ করতে বলি, তাহলে সে বাই বাই বলে চলে যাবে।’ এটা তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে আরও প্রচলিত। তাঁর পরামর্শ, এই সমস্ত কিছু বুঝতে হবে এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নমনীয় নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সুব্রহ্মণ্যম বলেন, উন্নত বিশ্ব গঠনের মূল উপাদান হল, মানব অভিবাসন, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, শক্তির রূপান্তর এবং স্থায়িত্ব।