শিশির গুপ্ত
গালওয়ান সেক্টরে সংঘর্ষের পর থেকে ভারত এবং চিনের মধ্যে তৈরি রয়েছে অচলাবস্থা। এই অবস্থায় পূর্ব লাদাখের চারটি পয়েন্ট থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়ায় কার্যত দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে।
দু'দেশের ডিভিশনাল কম্যান্ডাররা যখন গালওয়ান সেক্টরে লাগাতার বৈঠক করছেন, তখন গোয়েন্দা তথ্য থেকে স্পষ্ট যে চিনা সেনা কার্যত একচুলও নড়েনি। অথচ গত ৬ জুন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দু'দেশের সেনা পিছিয়ে যাবে।
সেই গতিপ্রকৃতি থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ (গালওয়ান), প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ (কোঙ্গকা লা) এবং প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৭-এ (হট স্প্রিং) সমাধানসূত্র বেরোতে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। প্যাংগং সো লেকের ক্ষেত্রে সেই সংঘাত মেটাতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
তবে দু'দেশের সম্পর্ক একেবারে যে নেতিবাচক দিকে এগোচ্ছে, তাও নয়। পূর্ব লাদাখে চিনা বায়ুসেনার রাত্রিকালীন কোনও অভিযান চালাচ্ছে না। দু'পক্ষই উত্তেজনা প্রশমনের সিদ্ধান্তগুলি সতর্কতার সঙ্গে মেনে চলেছে। সেই প্রোটোকলের (৬ জুনের সিদ্ধান্ত) ফলে মুখোমুখি উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমেছে।
গত সোমবার সংঘর্ষের পর নতুন করে উত্তেজনা না বাড়লেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে জিনজিয়াং এবং তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। একেবারে প্রস্তুত রয়েছে চিনা সেনা। জিনজিয়াং এবং তিব্বতে ঘাঁটি সক্রিয় করেছে চিনা বায়ুসেনা। আকসাই চিনে রাতে রীতিমতো নিজেদের শক্তি জাহিরও করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনা যাতে পিছিয়ে যায়, সেজন্য চাপ তৈরির চেষ্টা করছে বেজিং।
গত ৬ জুনের সিদ্ধান্তের ভারতীয় সেনার একটি অংশ উৎফুল্ল হলেও কূটনীতিবিদ এবং গোয়েন্দারা সতর্কতাবার্তা শুনিয়ে বলেছিলেন, পুরো বিষয়টি আগে বাস্তবে হোক! বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকদের বক্তব্য, নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য় পূরণ হওয়া সত্ত্বেও চিনের পিছিয়ে যাওয়ার ছিঁটেফোটা ইচ্ছা দেখায়নি পিএলএ।
চিনের সৈন্য সমাবেশ এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রমাণ আগেই মিলেছিল, যখন তারা এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোন আকসাই চিনে নিয়ে এসেছিল। তার আগে মে'র গোড়ার দিকে প্যাংগং সো লেকের কাছে ভারতের সুখোই-৩০ এমকেআই উড়েছিল। চিনের সৈন্য সমাবেশে এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র জড়োর করার ফলে প্রতিবেশী দেশের সামরিক উদ্দেশ্য নিয়ে কিছুটা ধন্দে তৈরি হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় সুরক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরে। তবে চিনা সেনা পুরো গালওয়ান উপত্যকা দখল এবং গালওয়ান-শিয়কে দারবুর শিয়ক দৌলত বেগ ওল্ডির রাস্তাকে নিজেদের কামান বাহিনীর কড়া নজরে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা শুধুমাত্র ভারতীয় সেনার তৎপরতার জন্যই ভেস্তে গিয়েছে।
চিনা সেনার কোনওরকম অবৈধ গতিবিধি রুখতে ৩,৪৮৮ কিলোমিটারের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মিলিটারি কম্য়ান্ডারদের মধ্যে আলোচনায় অবশ্য়ই দ্রুত সমাধানসূত্র বের করতে হবে। নাহলে সামরিক 'দুর্ঘটনার' সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মত তাঁদের।