বিশ্বজিৎ মালিক। বয়স মাত্র ২৪। করমণ্ডলের সেই অভিশপ্ত ট্রেনের কামরায় ছিলেন তিনিও। পরে তার আর কোনও খোঁজ মিলছিল না। এদিকে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন হয়তো দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু বিশ্বজিতের বাবা হেলারাম মালিকের মন কিছুতেই মানছিল না। তাঁর মনের কোণায় কোথাও যেন এই আশা ছিল বিশ্বজিৎ বেঁচে আছে।
এরপর শুরু হয় খোঁজ। ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটি?
হাওড়ায় ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে বিশ্বজিতদের। দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরেছিলেন হেলারাম। এরপরই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ওই ট্রেনে যে তাঁর ছেলেও রয়েছে। এরপরই তিনি আর দেরি করেননি। ফোন করেন ছেলের ফোনে। সেই ফোন ধরেন বিশ্বজিৎ। তিনি খুব কষ্ট করে বলেছিলেন বাবা বেঁচে আছি। আর দুবার ভাবেননি হেলারাম। স্থানীয় অ্য়াম্বুলেন্স চালক পলাশ পণ্ডিত, শ্য়ালক দীপক দাসকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই বেরিয়ে পড়েন বালাশোরের দিকে। প্রায় ২৩০ কিমি ওই রাতে তাঁরা ঘুরেছেন। কিন্তু বিশ্বজিৎ কোথায় গেল?
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, হাল ছাড়েননি হেলারাম। একের পর এক হাসপাতালে খোঁজ করা শুরু করেন তিনি। কিন্তু কোথাও নেই। এদিকে বাহানাগা হাই স্কুলে ততক্ষণে মৃতের স্তুপ। কিন্তু বিশ্বজিৎ তো বলেছিল বেঁচে আছি বাবা। এই কথাটুকুই ভরসা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা হেলারামকে বলেছিলেন, আপনি বাহানাগা স্কুলে চলে যান। ওখানেই অস্থায়ী মর্গ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিশ্বজিৎ মারা গিয়েছে এটা কিছুতেই মানতে চাননি বাবা।
তবুও কিছুটা জোর করেই তিনি যান ওই স্কুলে। সেখানে পর পর দেহ শোয়ানো রয়েছে। কিন্তু কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন সময় শোরগোল। একটি দেহের ডান হাত নাকি নড়ে উঠেছে। ছুটে যান হেলারাম। গিয়ে দেখেন এটা তো বিশ্বজিতের হাত। এরপর আর দেরি করেননি তিনি। ওখান থেকে ছেলেকে তুলে নিয়ে তিনি প্রথমে বালাশোর হাসপাতালে। সেখান থেকে কটক হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে বন্ডে সই করে তিনি নিয়ে আসেন এসএসকেএমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে এমন একটা শারীরিক পরিস্থিতির মধ্য়ে বিশ্বজিৎ পড়েছিলেন যে তাঁর শারীরিক অধিকাংশ ক্রিয়া বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু বেঁচে ছিলেন তিনি।
তবে ডান হাত ভেঙে গিয়েছে। সেটাই কেঁপে উঠেছিল। বরাত জোরে ছেলের খোঁজ পেলেন বাবা। নাহলে কী হত ভাবতেই শিউরে উঠছেন হেলারাম।