দেবব্রত মোহান্তি
ওড়িশায় করমণ্ডল দুর্ঘটনার পরে কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও প্রিয়জনদের খোঁজ পাচ্ছেন না অনেকেই। হায়দরাবাদের মহম্মদ তনবীর আলম। বড় দাদা ও দুই ভাইপোকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি একজনের দেহকে তাঁর এক ভাইপো বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু অপর দেহটিকে তিনি তাঁর ১৪ বছরের অপর ভাইপো বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু ওই দেহটিকে আরও চারজন নিজেদের প্রিয়জন বলে দাবি করেছেন।
এদিকে কোচবিহারের শিবাকান্ত রায়ের দাবি তাঁর ২২ বছরের ছেলে বিপুল রায়ের দেহটি বিহারের একটি পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, আমি অরুণাচলে ছিলাম। খবর পেয়ে বিডিয়োর কাছে গিয়ে বলেছিলাম গাড়ি ব্যবস্থা করে দিন। সেটা নিয়ে এলাম। কিন্তু এইমসে এসে শুনলাম আমার ছেলের দেহ দুদিন আগে বিহারের একটা পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছে। আমি কী করব এবার?
করমণ্ডল যেন ওলটপালট করে দিয়েছে সব কিছুই। আজও রেললাইনের পাশে ব্যাগের অংশ, ভাঙা চুরি। এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততই দেহগুলিকে আর চেনা যাচ্ছে না। একেবারে পচে, গলে যাচ্ছে। কিছু চুড়ি, জামাকাপড় দেখে চিনতে হচ্ছে। এখনও বিহার, ওড়িশা, বাংলা, ঝাড়খণ্ডের একাধিক পরিবার তাঁদের দেহ পাচ্ছে না।
ভুবনেশ্বরের মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার বিজয় অমৃতা কুলাঙ্গে জানিয়েছেন, আমরা ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছি। দিল্লিতে এই পরীক্ষা হয়। ফলাফল পেতে ৭-১০ দিন সময় লাগে। ফলাফল মিলে গেলে আমরা দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেব।
তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পার্ভেজ লস্কর জানিয়েছেন, এইমসে এসে শুনলাম বাবার দেহ মালদার পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছে। একে তো প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা। তারউপর সেই মানুষটাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগও নেই। হাউ হাউ করে কাঁদছেন কোচবিহারের শিবকান্ত রায়।
ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, এনিয়ে কিছু বলব না। তবে ২০৬টি ডিএনএ নমুনা আমরা রেখেছি। সবগুলি পরীক্ষার জন্য় পাঠানো হবে।
এদিকে বাহানগাতে যে স্কুলে বডি রাখা হয়েছিল সেখানে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে পড়ুয়ারা। অনেকেই দাবি তুলেছে স্কুল ভেঙে নতুন স্কুল করে দিতে হবে। আপাতত স্কুলে পুজোপাট করা হবে। তারপর প্রয়োজনে সবরকম ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন কিছু ঘর মর্গ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্কুল ভেঙে দেওয়া হবে।