দেবব্রত মোহান্তি
সুরজ কুমার ঋষিধর। বাড়ি বিহার। চেন্নাইতে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তার। আর তারপর থেকে এক নয়া টানাপোড়েনে পড়েছেন তার বাড়ির লোকজন। গত ৫ জুন আধার কার্ড আর মানিব্যাগ দেখে তার দেহ চিহ্নিত করেছিলেন তাঁর বাবা বিজেন্দর ঋষিধর। কিন্তু তারপর এতদিন ধরে অপেক্ষা। মৃত ছেলের দেহ পাওয়ার জন্য।
কিন্তু এখনও অসহায় বাবা ছেলের দেহ পেলেন না। চোখের জল চোখেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আসলে ডিএনএ রিপোর্টের জন্য় অপেক্ষা করছেন তিনি। অনন্ত অপেক্ষা। শুধু তিনি নন, এমন অনেকেই প্রিয়জনের দেহের জন্য় অপেক্ষা করছেন।
বিজেন্দর জানিয়েছেন, প্রথমে বলা হয়েছিল ৪৮ ঘণ্টা পরে ডিএনএ রিপোর্ট দেবে। এরপর পাঁচদিন কেটে গেল। এক সপ্তাহ কেটে গেল। কিন্তু রিপোর্টও আসে না। দেহও মিলছে না। আমি দিনমজুর। গত এক সপ্তাহ ধরে এক পয়সাও আয় নেই। ধার করে ওড়িশাতে এসেছি। বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটাব?
তেমন মালদার অশোক রবি গত ৯দিন ধরে তার ভাইয়ের দেহ পাওয়ার জন্য় অপেক্ষা করছেন। মৃতের নাম কৃষ্ণ রবিদাস। যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তখনই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বেল্ট, জিন্সের প্যান্ট দেখে ভাইকে চিনতে পেরেছেন দাদা। কিন্তু সেই ডিএনএ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা।
তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরেই অনেকে প্রিয়জনের দেহ নিয়ে চলে যান। কিন্তু আমার ভাইয়ের দেহটা কিছুতেই দিচ্ছে না পুলিশ। আমি ওর কাপড় দেখে চিনতে পেরেছি। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্টের জন্য় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিহারের বেগুসরাই জেলার বাসিন্দা অজিত কুমার তার মৃত ভাইয়ের দেহ পেতে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন ভাইয়ের হাতে মহাকালের ট্যাটু ছিল। বড় নোখ ছিল ভাইয়ের দেহে। এসব দেখে চিনতে পেরেছি দেহ। কিন্তু সেই ৬ জুন থেকে রিপোর্টের জন্য় অপেক্ষা করছি।
এইমস ভুবনেশ্বরের প্রফেসর প্রভাস রঞ্জন ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, একাধিক ফ্য়াক্টর থাকে এই রিপোর্টে। ৭৫টি নমুনা দিল্লি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট পেতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়। কিন্তু কতগুলো নমুনা মিলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ বাবা মায়ের নমুনা পাওয়া যায়নি। সেই জায়গায় কাকা, ভাইপোর নমুনা নেওয়া হয়েছে। এতে সমস্যা হতে পারে। কারণ তাঁরা একেবারে নিকট সম্পর্কের নন। বাবা মায়ের নমুনা হলে মেলাতে সুবিধা হয়।