মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে বলেছিল, জলসায় নিয়ে যাবে। সরল মনে শিক্ষককে বিশ্বাস করেছিল ১১ বছরের বালক। গিয়েছিল মাস্টারের সঙ্গে। কিন্তু, সেই শিক্ষকই যে তার সঙ্গে চরম পৈশাচিক আচরণ করবে, তা কল্পনাও করতে পারেনি পঞ্চম শ্রেণির সেই ছাত্র। সেই ঘটনার ক্ষত আজও হয়তো তার মনে দগদগে হয়ে রয়েছে এবং থাকবে। তবে, এসবের মধ্যেই ঘটনার প্রায় চারবছর পর অন্তত আইনের নিয়মে সুবিচার পেল সে। সাজা হল সেই নিগ্রহকারী শিক্ষকের।
এই ঘটনা বাংলাদেশের নাটোরের। এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারই ছাত্রকে চরম যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় মামলা রুজু করেছিল নিগৃহীত বালকের পরিবার। গত কয়েক বছরের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হয় অভিযুক্ত শিক্ষক। আজ (বুধবার - ১২ মার্চ, ২০২৫) তার সাজা ঘোষণা করে আদালত।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে - সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি নাম আবদুর রহিম ওরফে কালু (২৭)। এক নাবালককে যৌন নিগ্রহের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকা আক্রান্ত নাবালকের পরিবারকে দেওয়া হবে। যাতে ওই টাকা ভবিষ্যতে ছেলেটির কাজে আসে।
এদিন বেলা ১১টা নাগাদ (স্থানীয় সময় অনুসারে) আবদুরের সাজা ঘোষণা করেন নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম। তিনি জানান, মামলাটির তদন্ত চলাকালীন আসামি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। বিচার চলাকালীন বাদি পক্ষের কাছ থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে আসামির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিশুকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
সাজা ঘোষণার সময় আদালত কক্ষেই উপস্থিত ছিল দোষী সাব্যস্ত হওয়া মাদ্রাসা শিক্ষক। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবক বড়াইগ্রাম উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
নাটোর জজ কোর্টের সরকারি আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ১৮ মে বড়াইগ্রাম উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। জলসায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে ওই মাদ্রাসা শিক্ষক ওই বালককে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
কিন্তু, এরপর তাকে নিয়ে সোজা মাদ্রাসায় চলে যায় ওই শিক্ষক। সেখানেই একটি ঘরের মধ্যে নাবালকের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় সে। তারপর তাকে ভয় দেখিয়ে বলে, এই ঘটনা যেন কোনও মতেই বালকটি চাউর না করে। তারপর নিজের মোটরবাইকে বসিয়ে বালককে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই চম্পট দেয় ওই মাস্টার।
কিন্তু, নিগৃহীত ছাত্র চুপ করে থাকেনি। সে তার বাবা-মাকে সব কথা জানায়। তাছাড়া, সেদিন বাড়ি ফেরার পর সে অসুস্থও হয়ে পড়ে। এরপরই বালকের পরিবার স্থানীয় থানায় ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের অভিযোগ দায়ের করে।