বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খেল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত 'আইআরসিটিসি দুর্নীতি' মামলায় আরজেডি সুপ্রিমো ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, তাঁর স্ত্রী তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী, এবং বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব-সহ একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। এই মামলায় লালু প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী, পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রেলের দুটি হেরিটেজ হোটেল বেসরকারি হাতে দেওয়াতে বিপুল টাকার নয় ছয় করা হয়েছে।আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিহার নির্বাচনের আগে লালু পরিবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও টালমাটাল উঠল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
আরও পড়ুন-ওষুধ কোম্পানিতে কোটি কোটি টাকার সুবিধা! ইডির জালে হিমাচলের সহকারী ড্রাগ কন্ট্রোলার
সোমবার দিল্লির রাউস অ্যাভেনিউ কোর্টের বিশেষ আদালতের বিচারপতি বিশাল গোঙ্গে এই নির্দেশ দিয়েছেন। লালু প্রসাদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারার চার্জ গঠন করেছে আদালত। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। যদিও তাঁরা সকলেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাবড়ি দেবী গোটা মামলাকেই ভুল বলে দাবি করেছেন। আদালত বলেছে যে লালুর নেতৃত্বে এই ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছিল। তবে, অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছে। আদালত যখন লালু প্রসাদ যাদবকে জিজ্ঞাসা করে যে তিনি কি তার দোষ স্বীকার করেছেন, তখন লালু, রাবড়ি এবং তেজস্বী যাদব তাঁদের দোষ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। তারা বলেন যে তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন। যেসব ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে আইপিসি ৪২০, আইপিসি ১২০বি, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) এবং ১৩(১)(ডি) ধারা। আদেশে বলা হয়েছে, লালুর জ্ঞানেই এই ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছিল। আদালত বলেছে যে রাবড়ি এবং তেজস্বী কম দামে জমি পেয়েছেন।এই মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কয়েক মাস আগে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। তখন থেকেই জল্পনা ছিল এই মামলার পরিণতি নিয়ে। এদিন আদালতের ঘোষণায় আরজেডি-সহ গোটা বিরোধী শিবির বিহার বিধানসভার মুখে বড় ধরনের চাপে পড়ল কোন সন্দেহ নেই।
২০০৪ থেকে ২০০৯ এই সময়কালে দেশের রেলমন্ত্রী ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। সেই সময়ে আইআরসিটিসি হোটেল রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি প্রদান সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, দু'টি হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি বিজয় ও বিনয় কোচারের মালিকানাধীন সুজাতা হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড-কে বেআইনিভাবে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ছিল এই হস্তান্তরে লালু প্রসাদ এবং তার স্ত্রী রাবড়ি ও ছোট ছেলে তেজস্বী আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। মামলায় মোট ১৪ জন অভিযুক্ত রয়েছেন। আদালত ২৯ মে মামলার শুনানি শেষ করেছিল, সেই থেকে রায় সংরক্ষণ করে, এবং পরে ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারক অভিযুক্তদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে এর আগে সিবিআই ২০১৭ সালে লালু যাদব এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। সিবিআই দিল্লির আদালতকে বলেছিল যে সমস্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে। লালু যাদবের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে অভিযোগ গঠনের জন্য কোনও তথ্য নেই এবং টেন্ডারগুলি ন্যায্যভাবে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আদালতের এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মামলা এবং আদালতের নির্দেশের কারণে ভোটের সময় রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। লালু যাদবের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগগুলি তাদের নির্বাচনী প্রচারে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।