করোনা মহামারী রোখার জন্য একুশ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে দেশে। প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যা। বর্তমানে হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে ১৫০০-র কাছাকাছি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত এখনও পর্যন্ত ২৭, মারা গিয়েছেন চারজন।
বাংলা অত্যন্ত জনবহুল রাজ্য হলেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যে অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় কম, তা নিশ্চিত ভাবেই রাজ্যবাসীর কাছে স্বস্তির খবর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে করোনার টেস্ট দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম। সত্যি কথা বলতে, এই মাপকাঠিতে একেবারেই পিছনের সারিতে বাংলা। তবে সার্বিকভাবে বিশ্বের নিরিখে ভারতের টেস্টিং রেকর্ডও তেমন ভালো নয়।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই রোগকে নির্মূল করতে গেলে প্রথমে খুঁজে বার করতে হবে কারা করোনায় আক্রান্ত। তারপরে তাদেরকে আলাদা করে রাখতে হবে। নয়তো তাদের থেকে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে করোনা। সেই পরিপ্রক্ষিতে টেস্টিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওপরের গ্রাফিক্সটি দেখলেই বুঝবেন, ৩০ মার্চ অবধি প্রতি মিলিয়ন অর্থাত্ দশ লক্ষে ভারতে গড়ে ৩১.৭ টেস্টিং হয়েছে । দক্ষিণ কোরিয়াতে সেখানে তুলনায় ৭৬৫৩.৬ লোকের টেস্টিং হয়েছে, ইতালিতে ৭৫১৩.২, আমেরিকায় ১৯২১.৭ জনের। এমনকী জাপানও প্রতি দশ লক্ষ মানুষে ২১৩.৪ জনকে টেস্ট করেছে।
এবার ভারতের মধ্যে রাজ্যগুলির হাল দেখা যাক। দেশে ৩০ মার্চ অবধি মোট ৩৮,৪৪২ টেস্ট হয়েছে বলে হিন্দুস্তান টাইমসের হিসাব বলছে। এর মধ্যে ৬,৬৯০ টেস্ট হয়েছে কেরালায়। রাজস্থানে ৪০৮৫ করোনা টেস্ট হয়েছে, মহারাষ্ট্রে হয়েছে ৩৬৫৬টি টেস্ট। কর্নাটকে হয়েছে ৩১৭০ টেস্ট, তামিলনাড়ুতে ২৪৫৬, দিল্লিতে ২০৪৯টি টেস্ট। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে মাত্র ৪৭৫টি টেস্ট। দশ লক্ষ মানুষের হিসাবে দেখলে মাত্র ৫.২ জনের করোনার পরীক্ষা হয়েছে। দেশে গড় যখন, ৩১.৭ প্রতি মিলিয়নে, পশ্চিমবঙ্গে সেটি ৫.২। এটি যে অনেকটা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য।
যেসব রাজ্যের তথ্য আছে এই ওপরের গ্রাফিক্স, এক মিলিয়নে কত লোকের টেস্ট হয়েছে, সেই মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে নীচে। ধারেকাছে তিন পড়শি রাজ্য বিহার (৭.৬), ঝাড়খণ্ড (৫.৯) ও ওড়িশা (৮.৮)। বড় রাজ্যের মধ্যে দশের নীচে আছে মধ্যপ্রদেশ (৮.৩)।
এখানেও কেরালা শীর্ষে। প্রতি দশ লাখে ২০০.৩ গড়ে লোকের টেস্ট হচ্ছে করোনা আছে কিনা দেখার জন্য। একশোর ওপর আছে দিল্লি (১২২.১)। দেশের মধ্যে শীর্ষে লাদাখ (১২৮৩.৩)।
পশ্চিমবঙ্গের এরকম হাল কেন? আগের জনগণনা অনুযায়ী নয় কোটির ওপর লোকের বাস এই রাজ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে বলেছিলেন একটাও কিট পাঠায়নি কেন্দ্র। পরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন যে দশ হাজার কিট পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, RNA extraction এর জন্য প্রয়োজনীয় কিট ছিল না। বর্তমানে ছটি জায়গায় রাজ্যে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হচ্ছে। আরও পাঁচটি ল্যাব আইসিএমআরের ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায়।
ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার সুমন পোদ্দার বলেছেন যে অধিকাংশ টেস্ট হচ্ছে শহরাঞ্চলে। যেখানে ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা অনেকেই বাংলার গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। তাদের পরীক্ষা হওয়ার দরকার। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে কিছুটা টেস্টিং বাড়লেও দ্রুত পশ্চিমবাংলাকে দেশের গড়ের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে করোনার করাল গ্রাস বঙ্গে এসে পড়েনি।