করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ রুখতে বহু দেশে লকডাউন জারি হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ অমান্য করার খেলায় মেতেছে তথাকথিত উন্নত দেশের নাগরিকরা।
জার্মানিতে লকডাউনের মাঝে বিশেষ ‘করোনা পার্টি’-তে মাতছেন তরুণরা। প্রবীণদের নিশানা করে কাশির দমক তোলা হচ্ছে। স্পেনে পুলিশের ব্যারিকেড ডিঙোতে পোষা ছাগল রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন বার্লিনবাসী। ফ্রান্স, ফ্লোরিডা ও অস্ট্রেলিয়ায় জমকালো কাইটসার্ফিং উৎসব চলেছে। হুল্লোড়ের মেতে সৈকতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।
নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীদের আটকাতে তৎপর পুলিশ ও প্রশাসন। কয়েক জায়গায় পুলিশ জমায়েত ভাঙতে গেলে ক্ষেপ্ত জনতা উলটে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে।
পরিস্থিতি দেখে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্তোফ কাস্তানের মন্তব্য করেছেন, ‘নিয়ম ভেঙে অনেকেই নিজেদের ছোটখাট হিরো মনে করছেন। তাদের জানাই, না। আপনি নিতান্তই এক অভদ্র লোক এবং নিজের কাছেই আপনি মূর্তিমান বিপদ।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউনে থাকার পরে ধৈর্য হারিয়ে ফ্রান্সে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। পুলিশকে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে হচ্ছে রেল স্টেশনে, কারণ বেশ কিছু পরিবার ট্রররেন ধরে বিভিন্ন পর্যটনকককেন্দ্রে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন চলতে থাকলে প্রান্তিক পাহাড়-নদী-জঙ্গল-সৈকতে অচিরেই হানা দেবে মারাত্মক Covid-19। শহরের মতো পরিকাঠামোর অভাবে সেখানে কাতারে কাতারে লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার নিস শহরে সেইন নদীর তীরের হাঁটাপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিস শহরে রাতে কার্ফু জারির নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ক্রিস্তিয়ান এসত্রোসি, যিনি নিজেও আপাতত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশ্বজুড়ে Covid-19 এ মৃতের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গেই আমোদপ্রিয় জনতার ভিড় বাড়ছোে আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের সৈকতগুলিতে। বিশেষ করে কলেজে বসন্তকালীন ছুটি থাকায় সমুদ্রের তীরে জনপ্রিয় সৈকতাবাসগুলিতে প্রতিদিন এসে পৌঁছচ্ছে নবীন পর্যটকের দল। দিনভর বিচের উপর তারা নানান প্রমোদে মেতে উঠছে। সংক্রমণ রুখতে বন্ধ করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের বিচগুলি।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর গত শনিবার জানিয়েছেন, রাজ্যের মোট করোনা আক্রান্তের প্রায় ৫০% রোগী ১৮-৪৯ বছর বয়েসি। নবীন প্রজন্মকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনারা কেউই সুপারম্যান অথবা সুপারউওম্যান নন।’
পাশাপাশি, করোনাভাইরাসের আতুরঘর হিসেবে পরিচিত চচচিনের উহান শহরে গত কয়েক দিন যাবৎ Covid-19 আক্রান্ত কোনও নতুন রোগীর সন্ধান মেলেনি। নিজে ফরাসি হওয়ার সুবাদে উহানের আন্তর্জাতিক ক্লিনিকের প্রধান স্বাস্থ্য আধিকারিক ফিলিপ ক্লেইন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দরকার সাহস, ধৈর্য আর সৌভ্রাতৃত্বের। ফরাসিদের প্রতি আমার আবেদন, এই নিয়ম নিজেদের মতো করে ফ্রান্সেও চালু করুন।’