কানপুরের হোমে ৫৭ জন আবাসিক করোনা আক্রান্ত হওয়ার জেরে এবং তাঁদের মধ্যে পাঁচ নাবালিকা অন্তঃস্বত্ত্বা থাকায় হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠল। ঘটনার জেরে জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দিলেন কানপুরের জেলা কমিশনার।
গত চার দিনে কানপুরের সরকারি ও সরকার নিয়ন্ত্রিত মহিলা ও শিশু হোমের ১৭১ জন আবাসিকের মধ্যে ৫৭ জনের নমুনা করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এর জেরে ওই সমস্ত হোমের পরিচালকদের বিরুদ্ধে জেলাশাসক ব্রহ্মদেব রাম তিওয়ারিকে অনুসন্ধানের পরে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কানপুর ডিভিশনের কমিশনার সুধীর এম বোবডে।
ইতিমধ্যে ওই ৫৭ জন সংক্রমিত আবাসিক এবং করোনা আক্রান্ত এক হোম কর্মীকে লেভেল ওয়ান ও লেভেল টু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভরতি করা হয়েছে। বাকি ১১৪ জন নাবালিকা আবাসিক এবং হোমের ৩১ জন কর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে কানপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (KDA) পানকি অঞ্চলে অবস্থিত বহুতল কেডিএ ড্রিমস-এ।
ঘটনার জেরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন সমাজ আন্দোলনকর্মী নূতন ঠাকুর। আবেদনে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নাবালক ও মহিলা হোমগুলির আবাসিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অমান্য করার অভিযোগও আনা হয়েছে। আবেদনে উল্লিখিত শীর্ষ আদালতের সবিস্তার নির্দেশাবলী উত্তর প্রদেশ সরকারের সমস্ত মুখ্য সচিবকে এ মেল মারফৎ পাঠানো হয়েচে বলে জানিয়েছেন ঠাকুর।
সম্প্রতি সিপিআই পলিটব্যুরো সদস্য সুহাসিনী আলির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল জেলা কমিশনের সঙ্গে দেখা করে ঘটনা সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, হোমে ভরতি করার সময় যে সমস্ত নাবালিকা অন্তঃস্বত্ত্বা ছিল, তাদের গর্ভপাতের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কি না। কোবিড পরীক্ষার পরে দুই আবাসিক এইচআইভি পজিটিভ এবং হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত দেখা যায়। প্রতিনিধিদল প্রশ্ন তুলেছে, হোমে ভরতির সময় আবাসিকদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা আদৌ করা হয়েছিল কি না? গোটা বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীরা। তাঁদের মতে, ঘটনার মধ্যে একাধিক অপরাধ ও গাফিলতির বিষয় জড়িত রয়েছে, যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
সরকারি ও সরকার পরিচালিত হোমগুলিতে চূড়ান্ত অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে একাধিক দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেতারা।
এদিকে, আশ্রয় হোমে থাকা নাবালিকাদের গর্ভধারণ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশান। জেলাশাসক দাবি করেছেন, সংকটের সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধ সংগঠিত করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, গত মে মাসের বৈঠকে সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে বলা হয়েছিল কানপুরের জেলা প্রোবেশন অফিসার অজিত কুমারকে। সাম্প্রতিক ঘটনার দায় এড়াতে চেয়ে তিনি নিজের তরফে কোনও রকম গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পাশাপাশি, হোম পরিচালক ও কর্মীদেরও দায়িত্বে অবহেলার কথা তিনি মানতে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি, হোমে ভরতি করার আগে নাবালিকাদের মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে এইচআইভি ও হেপাটাইটিস পরীক্ষা না হয়ে থাকলে তাঁর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন কুমার।
জানা গিয়েছে, বিবিধ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে সরকারি ও সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন হোমে এই মেয়েদের সুপারিশ করে পাঠায় শিশুকল্যাণ দফতর। জেলা প্রোবেশন অফিসারের দাবি অনুযায়ী, সেই সময় তাদের এইচআইভি বা হেপাটাইটিস সি ধরা পড়েনি। প্রশ্ন উঠেছে, সে ক্ষেত্রে হোমে থাকাকালীনই তাদের ওই দুই মারাত্মক সংক্রমণ ঘটেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এতে বহিরাগতের অবদান রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
উল্লেখ্য, এর আগেও উত্তর প্রদেশের সরকারি ও বেসরকারি হোমের আবাসিকদের অবৈধ যৌন ব্যবসা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির শিকার হওয়ার অভিযোগ ও প্রমাণ মিলেছে। সংবাদমাধ্যমে তাই নিয়ে তথ্য প্রকাশ, আদালতে দোষীদের শাস্তির পরেও এই বিষয়ে প্রশাসনের ঘুম যে এখনও ভাঙেনি, কানপুরের ঘটনাই তা প্রমাণ করল।