এবার কি করোনাভাইরাসের 'হটস্পট' হয়ে উঠতে চলেছে দিল্লির নিজামুদ্দিন? সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে প্রশাসনের। আতঙ্কিত স্থানীয়রাও।
আরও পড়ুন : Public Sector Bank Merger-আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
সেই আতঙ্কের মূলে রয়েছে তবলিঘি জামাত নামে একটি মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনের জমায়েত। চলতি মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলা সেই জমায়েতে দেশ-বিদেশের ২০০০-এর বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। হাজির ছিলেন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের অনেকও।
আরও পড়ুন : ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে অর্থবর্ষ, সাফ জানাল অর্থমন্ত্রক
সেই সময় দেশজুড়ে লকডাউন শুরু না হলেও ততদিনে ভারতে করোনার প্রকোপের প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। ফলে বড় জমায়েত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। সরকারিভাবে গত ১৬ মার্চ ৫০ জনের বেশি যে কোনও ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখনও নিজামুদ্দিনের জমায়েত ঘিরে তেমন কোনও তৎপরতা শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন : মোহনবাগানের পর করোনার জালে বল জড়াতে মাঠে নামল ইস্টবেঙ্গল
কিন্তু গত সপ্তাহে শ্রীনগরে এক ধর্ম প্রচারকের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জানা যায়, ওই বৃদ্ধ দিল্লির জমায়েতে হাজির ছিলেন। তারপর উত্তরপ্রদেশেও গিয়েছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরেও তিনি একাধিক ধর্মীয় সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেই সভায় উপস্থিত কয়েকজনের করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা আক্রান্তের যোগসূত্র হিসেবে উঠে আসে নিজামুদ্দিনের জমায়েত। জামাতের সদর দফতর মার্কাজে (বাঙ্গেওয়ালি মসজিদ নামেও পরিচিত) উপস্থিত কমপক্ষে ৩৭ জনের দেহে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। সোমবার তেলাঙ্গানায় করোনায় মৃতরাও সেই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : করোনা সংকট মোকাবিলায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কুসংস্কার ও গুজব, দাবি নমোর
প্রশাসনিক আধিকারিককরা জানিয়েছেন, একাধিক ছোটো ছোটো জমায়েত জড়ো হয় জামাতের সদর দফতরে। সেখানে কমপক্ষে ২,০০০ জন থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। ছ'তলা কমপ্লেক্সের পাশে রয়েছে নিজামুদ্দিন থানা। কাছেই রয়েছে খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া। এছাড়াও একেবারে নাকের ডগায় রয়েছে বস্তি নিজামুদ্দিন। যেখানে ২৫,০০০-এরও বেশি মানুষের বাস। তাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন : স্থিতিশীল কলকাতার করোনা আক্রান্ত প্রবীণরা
নিজামুদ্দিন দরগার পরিচালন কমিটির সজস্য আলতামাশ নিজামি জানান, জমায়েতের জন্য দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ জামাতেক সদর দফতরে ছিলেন। তারপর তাঁরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যান। তবে ভিতরে খাবার বন্দোবস্ত আছে। ৪০ দিন পর্যন্ত সেখানে থাকা যেতে পারে।
আরও পড়ুন : করোনা সংকটের মাঝেই কোপ সরকারি বেতনে, রেহাই নেই ৪র্থ শ্রেণির কর্মী ও পেনশনভোগীর
আর এখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। লকডাউন ঘোষণার পর যে কোনও ধরনের ধর্মীয় জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারপরও জামাতের সদর দফতরে অনেকে থাকছিলেন। বস্তি নিজামুদ্দিনের বাসিন্দা ও সমাজকর্মী মহম্মদ উমের বলেন, 'অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম যে এখানে অনেকে জমায়েত হবেন। গত ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর আগে সেখানে বৈঠকও হয়। লকডাউনের পর লোকজন ভিতরে ছিল। কিন্তু গত দু'দিনে অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'
আরও পড়ুন : নিমপাতা থেকে ড্রোন-করোনা রোধে হরেক পন্থা অবলম্বন
যদিও দিল্লির পুলিশের ডিসিপি (দক্ষিণ-পূর্ব) আর পি মিনা মসজিদে জমায়েত নিয়ে কোনও অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। অন্য পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, 'জনতা কার্ফু'-র দিন থেকে মসজিদের সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এলাকায় যে কোনও রকম জমায়েত বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ২২ মার্চ পর্যন্ত মসজিদে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ থাকলেও তারপর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : ভাইয়ের থেকে সংক্রমিত হননি বরানগরের করোনা আক্রান্ত
তবে একটি সূত্রের খবর, মসজিদে ১,২০০-এর বেশি ভারতীয় ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ ভারতীয়। ঘরোয়া উড়ান পরিষেবা বাতিলের আগে জনতা কার্ফুর পরদিন পুলিশ তাঁদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। কিন্তু তাঁরা ফিরে আসেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১,৪০০ জন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যা প্রায় ৩০০।
আরও পড়ুন : COVID-19 Update: একদিনে দেশে করোনা আক্রান্তের রেকর্ড বৃদ্ধি
এদিকে, জমায়েতে যোগ দেওয়া অনেকের করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর রবিবার রাতে এলাকায় যায় দিল্লি পুলিশ, সিআরপিএফ ও চিকিৎসকদের দল। ২০০ জনেরও বেশি জমায়েতকারীরকে দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এলাকার কমপক্ষে ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানীয় কমিটি থেকেও গৃহবন্দি থাকার আর্জি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : করোনা সংকটের জেরে কৃষিঋণ শোধের সময়সীমা পিছোল সরকার
প্রশাসনিক আধিকারিকদের বক্তব্য, নিজামুদ্দিনের জমায়েতে অংশ নেওয়া মানুষ ট্রেন, বাস, বিমানে করে দেশ বা বিদেশের প্রান্তে গিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন। তাঁদের সকলের খোঁজ পাওয়া কার্যত অসম্ভব। তার জেরে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন প্রশাসন।