দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি রাজ্যের ব্যবস্থাপনায় ‘ফাঁকফোকর’-কে দায়ী করল কেন্দ্র। জানাল, নয়াদিল্লির চাপে ওই রাজ্যগুলি আসল তথ্য সামনে আনাতেই করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
গত কয়েকদিন দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মোটামুটি ২,০০০-২৫০০-এর মধ্যে থাকছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল আটটায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৯০০। অন্যদিকে, গত কয়েকদিনে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ৫০-৮০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) মৃতের সংখ্যা ১৯৫ বেড়েছে।
কী কারণে একদিনে এত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল, তা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। আমরা একটা সংক্রামক রোগের সঙ্গে লড়ছি। সময়মতো কেস রিপোর্ট করা এবং ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কয়েকটি রাজ্যে ফাঁক পেয়েছিলাম, তা উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে ঠিক করা হচ্ছে।’ কোনও রাজ্যের নাম না করলেও ইঙ্গিতটা কোনদিকে ছিল, তা বোঝার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধার হওয়ার কথা নয়।
পরে পশ্চিমবঙ্গের অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া নিয়ে (কেন্দ্রের হিসেবে সোমবার ছিল ৩৫, মঙ্গলবার বেড়ে হয়েছে ১৩৩) এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বলেন, ‘দেখুন আমি আগেও বলেছি, কয়েকটি রাজ্য থেকে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর খবর সময়মতো রিপোর্ট করা হয়নি, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর সেই কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। সেই কারণেই হঠাৎ আজ মৃতের সংখ্যা বেশি দেখছেন।’
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কেন্দ্রের তরফে কয়েকটি রাজ্য বললেও ইঙ্গিত মূলত কোনদিকে ছিল, তা স্পষ্ট। কারণ গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা একলাফে বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত যেখানে বাংলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৬৩। তা ২৪ ঘণ্টা পর বেড়ে হয়েছে ১২৫৯। অন্যদিকে ওই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৯৮।
কিন্তু দৈনিক যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার তার সঙ্গে পশ্চিবঙ্গের নয়া পরিসংখ্যান যোগ করলেও মঙ্গলবারের 'লাফ' মিলছে না? বরং বাংলার সংখ্যা বাদ দিলে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যার বৃদ্ধির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩,৬০৪। যা তার আগের ২৪ ঘণ্টার (রবিবার সকাল আটটা থেকে সোমবার আটটা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছিলেন ২,৫৫৩ জন) আক্রান্তের সংখ্যার থেকেও হাজার বেশি। মৃতের সংখ্যার ক্ষেত্রে সেই একই ধারা দেখা গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই পরিসংখ্যান খুব ভালোভাবেই জানে কেন্দ্র। সেজন্য কয়েকটি রাজ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে পুরো বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের উপর থেকে দায় এড়ানো যায় এবং রাজ্যগুলিকে দায়ী করা যায়।