গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। মোট সংক্রামিতের সংখ্যা ৭০,০০০-এর কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ করোনা আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১.২ শতাংশ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে ৩৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়েছেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে হয়েছে। যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁদের সুরক্ষা দেয়।
বিশ্বের পরিসংখ্যান নিরিখে ভারতে করোনা আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার হারও মোটামুটি একই। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭,১৫২। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৪,০০০ জন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪,১২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়ে ওঠার রোগীর সংখ্যা ১,৫৫৯। উদ্বেগের আবহের মধ্যেও যা স্বস্তির খবর বয়ে এনেছে।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ এপ্রিল সুস্থ হয়ে ওঠার হার ছিল ১০.৩ শতাংশ। এক মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২ শতাংশ। তাতে আশাবাদী কেন্দ্রও। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘সেরে ওঠার হার থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারতে প্রতি তিনজন করোনা আক্রান্তের মধ্যে একজন সেরে উঠেছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক, কারণ রোজ তা বাড়ছে।’
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও দ্বিগুণ হতে বেশিদিন সময় লাগছিল। লকডাউনের আগে যেখানে ৩.৪ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিল, তা একটা সময় ১২ দিনে পৌঁছে গিয়েছিল। গত ৩ মে দ্বিগুণ হওয়ার হার ছিল ১১.৫ দিন। কিন্তু গত তিনদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১০,০০০ বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার দ্বিগুণ হওয়ার হার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৬ দিন।
তাতেও অবশ্য খুব একটা আশঙ্কিত নন বিশেষজ্ঞরা। কারণ করোনায় মৃত্যুর সাপেক্ষে সুস্থ হয়ে ওঠার রোগীর হার বেড়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী প্রতি ১০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি দু'জনের মৃত্যু হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান যুগল কিশোর বলেন, ‘কিছুক্ষণের জন্য করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানতালে বাড়বে সুস্থ হয়ে ওঠার হার। কারণ যতক্ষণ না মানবদেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে, ততক্ষণ তা ছড়িয়ে পড়বে। বড় একটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা না গড়ে ওঠা পর্যন্ত অনেক মানুষ সংক্রামিত হবেন। যে কোনও জায়গায় মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ আক্রান্ত হতে পারেন। সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশি কারণ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ সামান্য বা উপসর্গহীন হয়। সুস্থ হয়ে ওঠার হার প্রমাণ করে, ভারতীয় জনসংখ্যার মধ্যে মৃত্যুর প্রকোপ বেশি নয়। আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এবং চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে দিচ্ছে।’
যে রাজ্যগুলিতে ১,০০০-এর বেশি করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে, তার মধ্যে তেলাঙ্গানায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার সর্বাধিক। কেসিআরের রাজ্যের ৬২.৮ শতাংশ রোগী করোনা মুক্ত হয়েছেন। তারপর রয়েছে যথাক্রমে রাজস্থান (৫৮ শতাংশ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশ (৪৬.৭ শতাংশ)। দেশের মধ্যে সর্বাধিক করোনা প্রভাবিত মহারাষ্ট্রে সুস্থ হয়ে ওঠার হার মাত্র ১৮.৯ শতাংশ। যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন সুস্থ হয়ে ওঠার হারের তালিকায় অন্যতম নাম।