আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোভিড প্রতিষেধক টিকার ১০ কোটি ডোজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ওই মাসেই ভারতেও শুরু হতে পারে এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগসূচি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সিন চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালে নভেলকরোনাভাইরাস রোধে কার্যকরী প্রমাণিত হলে ডিসেম্বরে ভারতে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের জন্য জরুরি ভিত্তিক সরকারি অনুমোদন পেতে পারে সংস্থার ভারতীয় অংশীদার সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড। বৃহস্পতিবার এই কথা জানিয়েছেন সেরাম ইনস্টিটিউট-এর সিইও আদর পুনাওয়ালা।
পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থায় উৎপাদিত ভ্যাক্সিনের প্রাথমিক অংশ আপাতত ভারতে ব্যবহারের জন্যই তৈরি হবে। তবে আগামী বছরের গোড়ায় পুরোপুরি অনুমোদন পেয়ে গেলে মোট ভ্যাক্সিনের ৫০% ভারতের জন্য এবং ৫০% দরিদ্র দেশগুলির জন্য WHO-এর কোভ্যাক্স প্রকল্পের স্বার্থে উৎপাদন করা হবে।
বিশ্বের মোট পাঁচটি কোভিড ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারকের সঙ্গে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে চুক্তি করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। গত দুই মাসে মোট ৪ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাক্সিন উৎপাদন করেছে সংস্থা। কিছু দিনের মধ্যেই নোভাভ্যাক্স ইনকর্পোরেটিভ-এর তৈরি কোভিড টিকাও উৎপাদন করতে শুরু করবে সেরাম ইনস্টিটিউট।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা সিইও প্যাসকাল সরিয়োট জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বড় মাপের ভ্যাক্সিন উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তাঁর সংস্থা। টিকা উৎপাদনের জন্য ব্রিটেন জরুরি ভিত্তিক অনুমোদন দিলে ভারতেও সেই তথ্য জমা দেবে সেরাম। তবে শুধু অনুমোদন পেলেই হবে না, এর পর ভাবতে হবে কত দ্রুত সারা বিশ্বের জন্য কোভিড ভ্যাক্সিন প্রস্তুত ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
পুনাওয়ালার মতে, গোটা বিশ্বে টিকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গড়াবে। আগামী দুই বছরে সংক্রমণের হার ধীরেধীরে কমবে বলেও তাঁর দাবি। আসলে প্রতিষেধক উৎপাদনের খরচ যত কমবে ও বহুবিধ বাধা যত দূর হবে, ততই এ পথে অগ্রগতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানিয়েছেন, প্রথম দফায় পয়লা সারির কোভিড যোদ্ধাদের উপরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাক্সিন। এই ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেরাম প্রধান। তবে দেশের ১.৩ কোটি জনসংখ্যার সর্বাঙ্গীন টিকাকরণ প্রক্রিয়া যথাযথ সম্পূর্ণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন। বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া সফল করা নিঃসন্দেহে কঠিন উদ্যোগ।
পুনাওয়ালার মতে, সংক্রমণ রোধে ফাইজার ও বায়োএনটেক সংস্থার তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাক্সিন। দেশজুড়ে সঠিক টিকা বণ্টন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন খরচ সাপেক্ষ কোল্ডচেন পরিকাঠামো, যাতে -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকা মজুত করা যায়। আর এই কারণেই বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশ কোভিড প্রতিষেধক ব্যবহার করায় ব্যর্থ হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।
ওয়াকিবহাল সূত্রে খবর, ভারতে কোভিড টিকাকরণ প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে ৫০,০০০ কোটি টাকা সংরক্ষিত রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসে পুনাওয়ালা দাবি করেছিলেন, এর জন্য কমপক্ষে ৮০,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে। পরে অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে তিনি রাজি হননি।