স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে গেল। যদিও সেই পরিসংখ্যান প্রকাশের কিছুক্ষণ আগেই লালকেল্লার মঞ্চ থেকে আশা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, ভারতে তিনটি করোনা টিকার ট্রায়াল চলছে। একবার তা সবুজ সংকেত পেলেই বৃহাদাকারে উৎপাদন শুরু করে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার আটটা পর্যন্ত) দেশে ৬৫,০০২ জন নয়া করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। তার জেরে গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার পর স্বাধীনতা দিবসে ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৫২৬,১৯৩। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ৪৯,০৩৬। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন ১,৮০৮,৯৩৭ জন রোগী।
সেই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানের আগে অবশ্য আশার ঝিলিক দেখিয়ে মোদী জানান, করোনার টিকা ছাড়পত্র পেলে তা কীভাবে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে পৌঁছাবে, সেই রোডম্যাপ তৈরি আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন। ভারতে একটা বা দুটো নয়, ট্রায়ালের বিভিন্ন ধাপে আছে তিনটি টিকা। আমাদের বিজ্ঞানীরা সবুজ সংকেত দিলেই বৃহদাকারে উৎপাদন শুরু হবে। আমরা সেজন্য ইতিমধ্যে প্রস্তুত আছি। উৎপাদনের পাশাপাশি যতদূর কম সম্ভব সময়ে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে কীভাবে টিকা পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে একটি রোডম্যাপও আঁকা আছে।’
কোন কোন করোনা টিকার কথা বলেছেন মোদী?
ভারতে যে তিনটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, তার মধ্যে দুটিই তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক।
১) কোভ্যাক্সিন (Covaxin) : ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল কাউন্সিলের (আইসিএমআর) সঙ্গে যৌথভাবে 'কোভ্যাক্সিন' (Covaxin) তৈরি করছে ভারত বায়োটেক। সেটির দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। এই পর্যায়ে শরীরের বিভিন্ন কোষ এবং ফ্লুইডের প্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখা হবে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ মাসের বেশি ট্রায়াল চলবে।
২) জাইডকোভ ডি (ZydCov D) : ভারতের দ্বিতীয় ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’ তৈরি করছে ভারত বায়োটেকের জাইডাস ক্যাডিলা। সেই সম্ভাব্য টিকার নাম জাইডকোভ ডি (ZydCov D)। যা একটি ডিএনএ-নির্ভর প্রতিষেধক। আপাতত দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। সংস্থার আশা, আগামী বছরের মধ্যে টিকার চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়ে যাবে।
৩) চ্যাডক্স১-এস (ChAdOx1-S০) : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুইডিশ-ব্রিটিশ বায়োটেক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা যৌথভাবে সেই সম্ভাব্য টিকা তৈরি করেছে। ব্রাজিল ও আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ভারতে সেই টিকার ট্রায়াল শুরু করার জন্য ইতিমধ্যে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) অনুমোদন পেয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই)। আগামী নভেম্বরের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হবে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যদি মানবদেহে পরীক্ষানিরীক্ষা সফল হয়, তাহলে ১০০ কোটি ডোজ তৈরি করা হবে।
শুধু তাই নয়, ভারতে কমপক্ষে আরও চারটি ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’ চূড়ান্ত প্রি-ক্লিনিকাল পর্যায়ে আছে। সেগুলি শীঘ্রই মানুষের উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষানিরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করবে। চারটি সম্ভাব্য টিকাই কেন্দ্রের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে।