ইঞ্জেকশনের সাহায্যে শরীরে কোভিড ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার নাক ও মুখে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করে জীবাণুকে প্রবেশপথেই নিকেশ করার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পরীক্ষাধীন অধিকাংশ কোভিড ভ্যাক্সিনই কার্যকর করতে রোগীর শরীরের দুই বার প্রবেশ করাতে হবে বলে জানা যাচ্ছে। তাতেও সংক্রমণ সম্পূর্ণ নির্মূল হবে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন টিকা প্রস্তুতকারীরা। এই কারণে এবার মানবশরীরে ভাইরাস প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা করেছেন গবেষকরা।
এই কারণে নিঃশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেওয়া ভ্যাক্সিন সরাসরি ভাইরাসের কবলে থাকা বায়ু চলাচল পথের কোষগুলিকে নিশানা করবে, যার ফলে রোগীর শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে বলে তাঁদের আশা।
প্রচলিত চিকিৎসা রীতির থেকে আলাদা স্প্রে ও ইনহেলারের সাহায্যে প্রয়োগ করা এই ভ্যাক্সিন বর্তমানে আমেরিকা, ব্রিটেন ও হংকংয়ে গবেষণার অধীনে থাকা এই ভ্যাক্সিন কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার সাহায্যে সমাজের উপরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং তার জেরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্থরতা দূর করা যাবে বলেও মনে করছেন গবেষকরা। আগামী নভেম্বর মাস থেকেই শুরুহতে চলেছে এই ভ্যাক্সিনের মানবদেহে ট্রায়াল পর্ব।
আমেরিকার আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট বর্তমানে বায়োটেক সংস্থা অল্টিমিউন ইনকর্পোরেটিভ-এর অধীনে কর্মরত ফ্রান্সেস লান্ডের মতে, ‘আঞ্চলিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা জরুরি। যে সমস্ত ভ্যাক্সিনের সাহায্যে তা গড়ে তোলা গেলে প্রথাগত টিকাকরণ প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি কার্যকর হবে।’
নিঃশ্বাসবাহিত ভ্যাক্সিন নির্মাতারা ফুসফুস, নাক ও গলার কিছু অভিনব বৈশিষ্টের কথা মাথায় রেখেছেন। শরীরের এই সমস্ত অভ্যন্তরীণ অংশের ভিতরে শ্লেষ্মার আস্তরণ থাকে। এই সমস্ত অংশের পেশিতে জীবাণু প্রতিরোধকারী প্রোটিনের আধিক্য দেখা যায়, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে প্রতিহত করে।
গবেষকদের মতে, এই প্রোটিন সমৃদ্ধ পেশির কোষগুলিকে সক্রিয় করে তুললে ফুসফুসের গভীরতম অংশকে অনেক বেশি সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে শরীরের অন্য অংশে জীবাণু সংক্রমণও ঠেকাতে পারে এই সক্রিয় প্রোটিন সমৃদ্ধ কোষগুলি।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েরসংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ মাইকেল ডায়মন্ড জানিয়েছেন, ‘প্রথম দফার ভ্যাক্সিনগুলি বেশ কিছু সংখ্যক মানুষকে সুরক্ষিত করবে। কিন্তু আমার ধারণা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় তৈরি ভ্যাক্সিনগুলি এবং সেই সঙ্গে নিঃশ্বাসবাহিত ভ্যাক্সিন শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়বে।’
শুধু তাই নয়, শ্বাসবাহিত ভ্যাক্সিন স্প্রে-র সাহায্যে প্রয়োগকরা হয়। এতে ইঞজেকশন পদ্ধতির মতোসিরিঞ্জ ও সূচের প্রয়োজন হয় না। আবার সরবরাহের সময় কম তাপমাত্রাযুক্ত পরিবেশ না হলেও চলে। সর্বোপরি, এই ভ্যাক্সিন ব্যবহারের জন্য পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীরও দরকার পড়ে না। সাধারণের ব্যবহারযোগ্য এই ভ্যাক্সিনের দামও তুলনায় বেশ কম হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।