তিন সপ্তাহেরও কম সময় করোনাভাইরাসের তিন সম্ভাব্য টিকা নিয়ে আশার আলো দেখা দিল। সোমবার অ্যাস্ট্রোজেনেকার তরফে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’-এর গড়ে ৭০ শতাংশেরও বেশি কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সেই সম্ভাব্য টিকা তৈরি করেছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা। ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেন্ট’-এর উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই)। ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটেন ও ব্রাজিলে এজেডডি১২২২-এর (AZD1222 তথা সম্ভাব্য টিকা) যে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হয়েছে, তার প্রাথমিক মূল্যায়নে উচ্চপর্যায়ের ইতিবাচক ফলাফল মিলেছে। তাতে কোভিড-১৯ রুখতে টিকার উচ্চপর্যায়ের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’ একইসঙ্গে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী কোনও স্বেচ্ছাসেবকের শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়নি এবং কাউকে হাসপাতালে ভরতি করার প্রয়োজন হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে।
গড়ে ৭০ শতাংশ হলেও একটি ডোজের ক্ষেত্রে কার্যকারিতার মাত্রা ৯০ শতাংশের মতো বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যখন সম্ভাব্য টিকার একটি ডোজের ধরণ (এন=২,৭৪১) দেওয়া হয়েছে, তখন ৯০ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। সেক্ষেত্রে অর্ধেক ডোজ দেওয়া হয়েছিল। কমপক্ষে এক মাসের ব্যবধানে পুরো ডোজ দেওয়া হয়েছিল। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে সম্ভাব্য করোনা টিকার ডোজের ধরণ (এন=৮,৮৯৫)। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ব্যবধানে পূর্ণ ডোজ দেওয়া হয়েছিল। অ্যাস্ট্রোজেনেকার তরফে জানানো হয়েছে, ‘দুটি ডোজের মিলিত ফলাফলে গড়ে ৭০ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।’
ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাধীন সংস্থা ডেটা সেফটি মনিটরিং বোর্ড দেখেছে, প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য টিকার দুটি ডোজ প্রদানের পর দু'সপ্তাহ বা তার বেশি সময় থেকে করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা মিলছে। অক্সফোর্ডের ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’-এর মু্খ্য তদন্তকারী অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘এই ফলাফল থেকে বোঝা গিয়েছে যে আমাদের একটি কার্যকরী টিকা আছে। যা বহু জীবন বাঁচাবে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে আমাদের একটি ডোজের ধরণ ৯০ শতাংশের মতো কার্যকরী। যদি সেই ধরণ ব্যবহার করা হয়, তাহলে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে আরও অনেক মানুষকে টিকা প্রদান করা যাবে।’
প্রাথমিকভাবে সাফল্য মিললেও আরও মূল্যায়ন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা। আদতে কতটা কার্যকরী হয়, কতদিনের মধ্যে করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে, সেই সকল বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হবে। তারইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রাথমিক তথ্য জমা দিয়ে শর্তসাপেক্ষে বা আগেই অনুমোদনের কাঠামো তৈরি করছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নিম্ন আয়বিশিষ্ট দেশগুলিতে দ্রুত টিকা পাঠানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের ছাড়পত্র চাইবে সংস্থা।’ পাশাপাশি জার্নালে প্রকাশের জন্য প্রাথমিক ফলাফলে পুরো বিশ্লেষণও জমা দেওয়ার কাজ চলছে।