তড়িঘড়ি কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিভিন্ন মহলের দাবি, পর্যাপ্ত তথ্য ছাড়াই ছাড়পত্র দিয়ে আখেরে বিপদ ডেকে আনছে কেন্গ্র। যদিও এইমসের অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া জানালেন, প্রাথমিকভাবে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) কোভিশিল্ড প্রদান করা হবে। বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে কোভ্যাক্সিনকে। ততদিনে কোভ্যাক্সিনের আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
রবিবারই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ভি জে সোমানি দাবি করেছেন, প্রায় ৮,০০০ অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, কোভ্যাক্সিনের ফলে মানবদেহে ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া মিলেছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ২৫,৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে প্রায় ২২,৫০০ জনকে ইতিমধ্যে টিকা প্রদান করা হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী আপাতত কোভ্যাক্সিন সুরক্ষিত বলেই বিবেচিত হয়েছে। এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানান, 'সুরক্ষা নিয়ে ন্যূনতম উদ্বেগ থাকলেও আমরা কোনও কিছুর অনুমোদন দিতাম না। টিকাগুলি ১১০ শতাংশ সুরক্ষিত।'
তাতে অবশ্য বিতর্ক থেমে নেই। একাংশের মতে, আগেভাগেই কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির (এনআইভি) সঙ্গে যৌথভাবে যে করোনা টিকা তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। কারণ সেই টিকার ট্রায়ালের পর্যাপ্ত তথ্য নেই। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের দাবি, ‘কোভ্যাক্সিনের এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয়নি। আগেভাগে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তা বিপজ্জনক হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন দয়া করে বিষয়টি স্পষ্ট করুন। পুরো ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আপাতত অ্যাস্ট্রোজেনেকার (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার যৌথভাবে তৈরি টিকা) টিকার ব্যবহার শুরু করতে পারে ভারত।’
সেই বিতর্কের মধ্যেই এইমস অধিকর্তা বলেন, ‘কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে যখন আচমকা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের টিকা প্রদান করতে হবে, তখন ভারত বায়োটেকের টিকা ব্যবহার করা হবে। সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা কতটা কার্যকরী (ডিসিজিআই অবশ্য জানিয়েছেন, কোভিশিল্ড ৭০.৪৮ শতাংশ কার্যকারী), সে বিষয়ে যদি আমরা নিশ্চিত না হই, তখন এটাও (কোভ্যাক্সিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিভিন্ন প্রজাতির করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখে অনুমোদনে স্পষ্টভাবে জরুরি পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ট্রায়াল চালিয়ে যেতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। একবার তথ্য চলে এলে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার বিষয়ে আমরা আরও নিশ্চিত হব।’
তাহলে প্রথম পর্যায়ে দেশের করোনা যোদ্ধাদের কি শুধুমাত্র কোভিশিল্ড দেওয়া হবে? এইমস অধিকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সেরামের টিকা প্রদান করা হবে। তাদের ইতিমধ্যে পাঁচ কোটি ডোজ তৈরি আছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তারা টিকা দিতে পারবে। যে পর্যায়ে আমরা তিন কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। ধাপে ধাপে আমরা (টিকার সংখ্যা) আরও বাড়াব এবং তার মধ্যে ভারত বায়োটেকের তথ্যও পাওয়া যাবে।’