সরকারি কোষাগারের অবস্থা ভালো নয়। রোজের খাবারের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১.৬০ টাকা। তাই কঠিন সমস্যার মুখে মধ্য প্রদেশের সরকারি গো-শালার বাসিন্দারা।
২০২০-২১ সালের রাজ্য আর্থিক বাজেটে একলপ্তে ১৩২ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে গোরুর নিত্য খোরাকি খাতে। যার ফলে প্রতিদিন গোরুপ্রতি বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে সাকূল্যে ১ টাকা ৬০ পয়সা যা আগে ছিল ২০ টাকা। সরকারি গো-শালায় ঠাঁই পাওয়া গোরুদের খাদ্য জোগাতে তাই হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা।
গোরু পোষার খরচ তুলতে রাজ্যবাসীর থেকে চাঁদা তোলারও চেষ্টা করেছে প্রশাসন। সেই বাবদ উঠেছে সর্বমোট মাত্র ২২,০০০ টাকা। তার উপরে রাজ্য প্রাণীসম্পদ দফতরের উপরে চাপ তৈরি করা হয়েছে আরও ৭,০০০ নতুন গো-শালা তৈরি করার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণী সম্পদ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘এই বাজেটে যদি আমরা সব কাজ বন্ধ করকে শুধু গোরুর প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করি, তাতেও কুলোনো মুশকিল। রাজ্যের গো-শালাগুলিতে ১.৮ লাখ গোরু রয়েছে। প্রতিটি গোরুকে খাওয়ানোর জন্য বছরে ৬০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।’
প্রাণী সম্পদ দফতরের অধিকর্তা আর কে রোকড়ে জানিয়েছেন, ‘বরাদ্দ অর্থের অভাবে আমরা মধ্য প্রদেশের ১,৩০০ এর বেশি গো-শালা চালাতে এনজিও ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকেও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত ১২৯ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছে। আশা করি সেই অর্থের ব্যবস্থা করা হবে।’
ঢাকঢোল পিটিয়ে গো-সংরক্ষণের প্রচার চালানোর পরে কী কারণে এমন দুরবস্থার মুখে পড়ল রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি সরকারের গো-মাহাত্ম্য প্রচারের ইস্যুটি ফাঁকতালে লুঠ করেছে বিরোধী কংগ্রেস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের জমানায় অন্যান্য বিষয়ে উদ্যোগ না নিলেও গো-পরিচর্যায় রাজ্যে ৬৭৭টি গো-শালা নির্মাণ করা হয় সে আমলেই।
অন্য দিকে, নির্বাচনী প্রচারে গো-পরিচর্যায় জোর দিলেও প্রতিশ্রুতি পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে থাকা বর্তমান বিজেপি সরকার। ক্ষমতায় এসে ঝড়ের গতিতে গো-শালার সংখ্যা দ্বিগুণ করলেও তা সংরক্ষণ খাতে বরাদ্দ ছেঁটে প্রতিশ্রুতি পূরণে পদে পদে ব্যর্থতার নজির গড়ছে প্রশাসন।
গো-পালন ইস্যু মাথা চাড়া দিতেই তাল ঠুকে আসরে নেমে পড়েছেন বিরোধী নেতারা। প্রাক্তন প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী অধুনা কংগ্রেস বিধায়ক লাখান সিং যাদব তাই মন্তব্য করেছেন, ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথই তাঁর আমলে প্রথম গো-শালা নির্মাণের অসাধারণ উদ্যোগ নেন। বিজেপি সরকার বিষয়টি নিয়ে প্রচারে অনেক কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির নেতা-কর্মীরা শুধু নাম-যশ কুড়োতেই গো-মাহাত্ম্য প্রচার করেন। ওঁরা গোরুদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনাই করেন না।’
এই নিয়ে মধ্য প্রদেশের বর্তমান প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী প্রেম প্যাটেল বলেন, ‘রাজ্য অর্থ মন্ত্রককে অতিরিক্ত বরাদ্দের অর্থ দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। গোরুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আমরা গভীর ভাবে ভাবছি। আগের কংগ্রেস সরকার ৩,০০০ গো-শালা তৈরির পরিকল্পনা করার পরে হাজারখানেকও তৈরি করতে পারেনি। সেখানে আমরা ৭,০০০ গো-শালা নির্মাণ করব বলে ঠিক করেছি।’