সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত হয়েছেন বেশ কিছুদিন হল। তবে তাঁর ছেড়ে যাওয়া সাধারণ সম্পাদকের পদে এখনও কেউ বসছেন না। বদলে কো–অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন প্রকাশ কারাত। এই প্রকাশ কারাতকেই দায়ী করা হয় আজকের সারা দেশে সিপিএমের শূন্যতার জন্য। কারণ ইউপিএ–১ থেকে নিউক্লিয়ার ইস্যুতে সমর্থন প্রত্যাহার করার পর থেকে সিপিএমের অবস্থা ক্রমশ করুণ হয়েছে। একে গোপালন ভবন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরের কো–অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কারাতকে। ফলে নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ না আসা পর্যন্ত শূন্যই থাকবে ইয়েচুরির স্থান। সর্বসম্মতিক্রমে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতকে কো–অর্ডিনেটর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখন তিনিই কাজ চালাবেন।
এখানে আর একটা বিষয় আছে। সেটা হল—মৌখিকভাবে যদি এখন কাউকে সীতারাম ইয়েচুরির পদে বসানো হতো তাহলে দলের অন্দরে তুমুল ঝামেলা বেঁধে যেত। একদা প্রকাশ কারাতই ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। এই কো–অর্ডিনেশনের দায়িত্ব পাওয়ায় আবার কি বকলমে দলের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে চলে গেল? সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে মাদুরাইতে বসবে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। সেখানেই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক বেছে নেওয়া হবে। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন নেতা ৯ বছর পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারেন। সেই হিসেবে ২০২৫ সালে সীতারাম ইয়েচুরির মেয়াদ শেষ হতো।
আরও পড়ুন: ‘পুজো বলে বন্যা ত্রাণের কাজে মানুষের পাশ থেকে সরলে হবে না’, উত্তরকন্যায় বার্তা মমতার
কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন হল, সীতারাম ইয়েচুরিকে ইন্ডিয়া জোটের সবাই মেনে নিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে সকলের ভাল সম্পর্ক ছিল। প্রকাশ কারাতের সঙ্গে সেই সমীকরণ কারও নয়। সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটে থেকে কারাত কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে দলকে? সীতারাম ইয়েচুরির অবর্তমানে কে দায়িত্ব পাবেন সেটা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই নানা গুঞ্জন চলছিল। তবে সেসব গুঞ্জন বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। এখন পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসে নয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ওই পদ খালিই থাকবে। কো–অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করে যাবেন প্রকাশ কারাত। এখন দেখার প্রকাশ কারাত ইন্ডিয়া জোটে কেমন ভূমিকা নেন।
প্রকাশ কারাতকে নিয়ে দলের অন্দরেও মতভেদ আছে। তিনি সাধারণ সম্পাদক হলে দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হতো বলেই সূত্রের খবর। গত সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠক। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আপাতত কাউকে অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হবে না। পলিটব্যুরোই দলের যাবতীয় দায়িত্বভার সামলাবে। বরং একজন কো–অর্ডিনেটর বেছে নেওয়া হবে। যিনি গোটা বিষয়টি আপাতত পরিচালনা করবেন। যতদিন না পর্যন্ত পার্টি কংগ্রেস হচ্ছে। সিপিএমের জন্মলগ্ন থেকে সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন কোনও নেতার প্রয়াণ ঘটেনি। তাই দলের কাছে এই পরিস্থিতি নতুন।