সিপিএমের এখন উভয় সংকটের অবস্থা। একদিকে তৃণমূল যে জোটে রয়েছে সেই একই মঞ্চে গিয়ে বসতে হচ্ছে। আবার ইন্ডিয়া জোটে না গেলে জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে সিপিএম। তবে এবার সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়া জোটে যা হচ্ছে হোক, কিন্তু বাংলায় মমতা বিরোধিতায় আরও সুর চড়াবে সিপিএম।
তবে সূত্রের খবর, আপাতত মধ্যমপন্থা অবলম্বন করছে সিপিএম। জোটে থাকবে অথচ জোটের কমিটিতে থাকবে না তারা। মানে নদীতে নামবেন অথচ চুল ভেজাবেন না। তবে এই রসায়ন আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।
আসলে জোটের মিটিংয়ে একই মঞ্চে আর বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তারস্বরে চিৎকার, এই দুই বিপরীত তত্ত্ব মিলছে না কিছুতেই। সিপিএমের পলিটব্যুরো শনি ও রবিবার দিল্লিতে দুদিনের বৈঠক ডেকেছিল। সেখানে আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জোটে থাকলেও জোটের কোনও কমিটিতে সিপিএম থাকবে না।
কার্যত এবার জাতীয় রাজনীতিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে চাইছে সিপিএম। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দলের এই অবস্থানকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই দলের নীচুতলাতেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জোটের বৈঠকে যেভাবে বাম নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের অবস্থান দেখা গিয়েছে তাতে অত্যন্ত অস্বস্তিতে বঙ্গ সিপিএমের নীচুতলার কর্মীরা। যে তৃণমূল বাংলা থেকে সিপিএমকে বিতাড়িত করেছে, জাতীয় রাজনীতিতে সেই তৃণমূলের সঙ্গে হাত ধরাটা কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সূত্রের খবর, সেই পরিস্থিতিতে বঙ্গ সিপিএমের একাংশ পলিটব্যুরোর মিটিংয়ে জানিয়ে দেন দলের নীচুতলায় অন্যরকম বার্তা যাচ্ছে। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সেক্ষেত্রে গ্রাম বাংলায় সংগঠন ধরে রাখাটাই এখন সিপিএমের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকী সাধারণ মানুষের কাছে জবাব দেওয়ার মতো সদুত্তর সিপিএম নেতাদের নেই। সেক্ষেত্রে কার্যত বঙ্গ সিপিএমের আপত্তিতেই আপাতত ঠিক হয়েছে জোটে থাকলেও জোটের কোনও কমিটিতে থাকবে না সিপিএম।
অনেকের কাছে সিপিএমের এই অবস্থান কার্যত সুবিধাবাদী বলেই মনে হয়েছে। কারণ তৃণমূলকে নিয়ে যদি সিপিএমের অ্য়ালার্জি থেকেই থাকে তবে জোটে কেন গেল তারা? সেক্ষেত্রে সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, বিজেপি বিরোধী জোটে সামিল না হলেও ভুল বার্তা যাবে। অন্যদিকে বাংলায় তৃণমূল বিরোধী, মমতা বিরোধী সুরকে আরও জোরালো করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসলে সিপিএমের এখন দিশেহারা অবস্থা। জোটে না গেলেও বিপদ। আবার জোটে গেলেও মানুষ বিশ্বাস হারাচ্ছে । অগত্যা এখন নীতি জোটে থাকব কিন্তু কমিটিতে নয়। তবে কি যৌথ সভাতে থাকবে? সেই প্রশ্ন সময়ই বলবে।