২০১৮ সালে সুন্দরবনকে ডাকাত মুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে সম্প্রতি, ফের বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ডাকাতদল। অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি এবং সহিংস ডাকাতির ঘটনার বেড়ে যাওয়ায় আবার এই অঞ্চলটি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে ১২০০ ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হল
প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলে ডাকাতদলকে সমাজের মূল স্রোতে ফেরার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। তারপরেই বহু দুষ্কৃতী আত্মসমর্পণ করেছে। বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৩২টি দলের ৩২৮ জন দুষ্কৃতী আত্মসমর্পণ করেছে। তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২২,০২৪ রাউন্ড গোলাবারুদ হস্তান্তর করেছে। আত্মসমর্পণের পর, অনেক দুষ্কৃতী সরকারি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত নজরদারির অভানের কারণে এই দুষ্কৃতীদের মধ্যে বেশ কিছু পুনরায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে। তারা মৎসজীবী এবং মধু সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে লুটপাট চালাচ্ছে অথবা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করছে।যারফলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উপরে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা মৎসজীবী এবং মধু সংগ্রহকারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে এলাকাটি।
অভিযোগ উঠেছে নজরদারি কমে যাওয়ার কারণেই সেখানে অপরাধ বেড়েছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, আসাবুর বাহিনী, শরীফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী এবং দয়াল বাহিনী - বিশেষ করে পশ্চিম সুন্দরবন, খুলনার কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এই ডাকাত দল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া কিছু বন্দিও এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছে।
মূলত বন কর্মকর্তাদের ছদ্মবেশে মাছ ধরার নৌকা আটক করে টাকা আদায় করা অথবা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিচ্ছে। অনেক মৎসজীবীকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পালাতে সক্ষম হওয়ার পর নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে পুলিশকে। জানা যাচ্ছে, গত চার মাসে পশ্চিম সুন্দরবনে অন্তত ৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে, ৮ নভেম্বর কয়রা উপজেলার দুই মৎসজীবী আতাহার হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছিল। জানা যায়, ডাকাত দল নিজেদের দয়াল বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহরণ করেছিল। এরপরে তাদের পরিবারের কাছে ৪ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকা পাওয়ার পর তাদের মুক্ত করে দুষ্কৃতীদল।
গত ১২ নভেম্বর কোস্ট গার্ড (পশ্চিম অঞ্চল) দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে দুটি বন্দুক এবং চারটি গুলি বাজেয়াপ্ত হয়েছেন। সুন্দরবনে ডাকাত দল সক্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে সহকারী বন সংরক্ষক এজেডএম হাসানুর রহমান জানান, তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১০ জন মৎসজীবী, তিনটি নৌকা, একটি সোলার প্যানেল এবং একটি বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক আনোয়ারুল কাদির দুষ্কৃতীদের ধরতে এবং মৎসজীবী ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ ও নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।এবিষয়ে কোস্টগার্ডের কমান্ডার (পশ্চিমাঞ্চল) ক্যাপ্টেন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ জানান, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত টহলদারি চলছে এবং গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত রয়েছে।