মধ্যরাত নয়, তার আগেই স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ল ‘নিভার’। সেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মেঘের অংশ স্থলভূমিতে প্রবেশ করছে। আগামী তিন ঘণ্টায় ‘নিভার’ ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে পারে। কখনও কখনও হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে।
মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০ টা ৩০ মিনিট নাগাদ ‘নিভার’-এর প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী তিন ঘণ্টা সেই প্রক্রিয়া চলবে। তারপর তা পুদুচেরির কাছে উপকূলের দিকে যাবে। সেই বুলেটিন (রাত ১১ টা ১৫ মিনিট) অনুযায়ী, তামিলনাড়ুর কুড্ডালোরের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ‘নিভার’। আর পুদুচেরির পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।
সেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভূমিতে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ফলে ঝড়ের গতিবেগ আরও বেড়েছে। তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম, চেন্নাই-সহ বিভিন্ন প্রান্তে ঝোড়া হাওয়া বইছে। বেড়েছে বৃষ্টির তীব্রতা। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। চেন্নাই এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। তার জেরে ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুত্ পরিষেবা। রাস্তায় হাঁটু-সমান জল জমে গিয়েছে। নীচু এলাকার ঘরগুলিতে জল ঢুকেছে। একই অবস্থা পুদুচেরিতেও। সেখানেও ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের (এনডিআরএফ) তরফে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে এক লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত ৫২৫ শিশু-সহ চেন্নাইয়ে ২,৭০৭ জনকে সরিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। জরুরি প্রয়োজনের জন্য উপকূলবর্তী সাত জেলায় ৪৬৫ টি সরকার অ্যাম্বুলেন্স তৈরি রাখা হয়েছে। পুদুচেরিতে ২৮৫ টি ত্রাণ শিবিরে ২,২৫০ জনকে রাখা হয়েছে। তবে মৌসম ভবনের অধিকর্তা ওয়াই ই এ রাজ বলেছেন, 'এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে হয়তো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না। কিন্তু তার প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে।'
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত কুড্ডালোরে ২২৭ মিলিমিটার, পুদুচেরিতে ১৮৭ মিলিমিটার, চেন্নাইয়ে ৮৯ মিলিমিটার, করাইকালে ৮৪ মিলিমিটার এবং নাগাপট্টনমে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রবল বর্ষণের জেরে সন্ধ্যা ছ'টার পর চেম্মাবারামাক্কাম জলাধার থেকে বাড়তি ৫,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। দুপুরেও ১,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। তামিলনাড়ু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জলের মাত্রা বাড়লে নিয়ন্ত্রিতভাবে আরও জল ছাড়া হতে পারে।
অন্যদিকে, স্থলভূমিতে পুরোপুরি প্রবেশের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার মোটামুটি ছ'ঘণ্টা পর্যন্ত তামিলনাডু়র রানিপেট, তীরুভান্নামালাই, তিরুপাত্তুর, ভেলোর, অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর, কুর্নুল, প্রকাশম, কুড়াপ্পা এবং পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব তেলাঙ্গানায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।