নিঃস্বার্থভাবে সন্তানকে বুকে আগলে রেখে মানুষ করেন বাবা-মায়েরা। শিক্ষিত করেন। কর্মঠ করে তোলেন। এমনকী, সংসারও গড়ে দেন। প্রত্যাশা বলতে এটুকুই যাতে শেষ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের লাঠি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এমনও কতিপয় সন্তানেরা সমাজে রয়েছে, নিজের পায়ে একবার দাঁড়িয়ে গেলে, ভুলে যায় বাবা-মায়ের অবদান। তাঁরা বোঝা হয়ে উঠে সেই সন্তানের কাছে। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়িছাড়া করতেও পিছুপা হয় না এক শ্রেণির সন্তানরা।
এমনই অমানবিকতার নজির গড়ল এক মেয়ে। অসুস্থ অশিতিপর মাকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে রেখে চলে গেল ছোট মেয়ে! শেষপর্যন্ত মুম্বইয়ে ওই বৃদ্ধার খোঁজ মিলল। মাকে ফিরিয়ে আনতে মুম্বই রওনা দিলেন বৃদ্ধার বড় মেয়ে। জীবনভর আগলে রাখার প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি।
ঘটা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন সাবিত্রীদেবী। ছোট মেয়ের বিয়ে দেন উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায়। বড় মেয়ের হুগলির রিষড়ায়। রামরাজাতলায় ছেলের সঙ্গেই থাকছিলেন বছর পঁচাত্তরের ডায়াবেটিসের রোগী এই বৃদ্ধা। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়েছিল তাঁর।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় ছোট মেয়ের বাড়িতে বৃদ্ধাকে রেখে আসেন ছেলে। তখন থেকে সেখানেই থাকছিলেন ওই বৃদ্ধা।ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তিনি আর অসুস্থ মাকে তাঁর কাছে রাখতে রাজি হচ্ছিলেন না। বারবার ভাইকে তাগাদা দিচ্ছিলেন, যাতে সে গিয়ে যেন মাকে সেখান থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে করোনার প্রভাব সহ-নানা কারণে ছেলেও মাকে সেই সময় আনতে যেতে পারেননি।
অভিযোগ, এরই মধ্যে কোনও এক দিন বাড়ির সামনের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ওই বৃদ্ধাকে বসিয়ে রেখে চলে যান ছোট মেয়ে। এই ঘটনার পর থেকে কোথাও ওই বৃদ্ধার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বড় মেয়ে কল্যাণীর দাবি, বেশ কয়েকবার ছোট বোনের কাছে মায়ের খোঁজ করেন তিনি। তখনই অভিযুক্ত ছোট মেয়ে জানায়, মাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্য দিকে, সাবিত্রীদেবী সেখান থেকে ট্রেনে চেপে মুম্বইয়ে পৌঁছে যান। তাঁকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখে উদ্ধার করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বৃদ্ধা অসুস্থ হওয়ায়, তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হতেই তাঁকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নেয় ওই সংস্থা। তাঁদের মাধ্যমেই বড় মেয়ে কল্যাণী খোঁজ পান মায়ের। শুধু তাই নয়, ভিডিও কলের মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয়। এদিন মাকে আনতে পরিবারের সঙ্গে ট্রেনে মুম্বইয়ে উদ্দেশ্যে রওনা দেন কল্যাণী।