কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত পাঁচ দিন ধরে শুরু হওয়া সংঘর্ষে কলম্বিয়ায় এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। জানা যাচ্ছে, ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ইএলএন) গত বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব কাতাটম্বো অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী এফএআরসি’র গেরিলা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় । তারপরেই দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এই অবস্থায় হিংসা মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হিংসা নিয়ন্ত্রণে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়ন করেছে কলম্বিয়া সরকার।
আরও পড়ুন: দেহ পুড়ে ছাই….নাইজেরিয়ায় গ্যাসোলিন চুরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণ, মৃত অন্তত ৮৬
মাত্র পাঁচ দিনে কলম্বিয়ার তিনটি বিভাগ জুড়ে সহিংসতার খবর পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণে প্রত্যন্ত আমাজন জঙ্গল থেকে ভেনিজুয়েলার পার্বত্য উত্তর-পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত এলাকাজুড়ে হিংসায় ১১ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধী গোষ্ঠীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ফলে সেখানে সাধারণ মানুষ আটকে পড়ে নিহত হয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, এই গোষ্ঠী শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চায়ছে এবং সেখানে অতি-লাভজনক কোকেনের ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চায়ছে। এই সংঘর্ষের পিছনে রয়েছে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা ইএলএন। সোমবার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেট্রো এই গোষ্ঠীর নেতাদের সতর্ক করেছেন। এই সংঘর্ষের ফলে সোমবার পর্যন্ত সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮০ জন। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার আগে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ইএলএন যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে তাই যুদ্ধ হবে। এরপরেই সীমান্ত এলাকায় প্রায় ৫,০০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। টিবু শহরে সারি সারি ভারী সশস্ত্র সৈন্যদের জড়ো হতে দেখা গিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে। তবে এখনও কিছু দুর্গম অঞ্চলে সহিংসতা চলছে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কলম্বিয়ায় প্রায় এক দশক শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু, দেশটির কিছু অংশ এখনও বিভিন্ন বামপন্থী গেরিলা, ডানপন্থী আধাসামরিক বাহিনী এবং মাদক পাচারকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরই আতঙ্কিত বাসিন্দারা মোটরসাইকেল এবং নৌকায় ভারী ব্যাগ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বহন করে পালিয়ে আসতে শুরু করেন। সেই সময় গাড়ির ধাক্কায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
বাসিন্দাদের জন্য টিবুতে বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বহু ঘরছাড়া মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে ভেনিজুয়েলায় পৌঁছন। চলমান সংঘর্ষে ভেনেজুয়েলায় পালিয়ে আসা একজন কৃষক বলেন, ‘একজন কলম্বিয়ান হিসাবে আমার দেশ ছেড়ে যাওয়া আমার জন্য বেদনাদায়ক।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি শান্ত হলে তবেই তিনি বাড়ি ফিরবেন। সোমবার কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, যে গুয়াভিয়ারের জঙ্গল সংলগ্ন আমাজন বিভাগে বিরোধী বামপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ে ২০ জন নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ শান্তি নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। তবে বামপন্থী গেরিলারা শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।