অনেকেই বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের নিজের অফিস ঘুরিয়ে দেখান। কর্পোরেট ক্ষেত্রে এটি খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। গলায় একটি ভিজিটর কার্ড থাকলেই হল। কিন্তু তাই বলে সব কাজে তো আর এমনটা করা যায় না। বিশেষত যদি আপনার 'অফিস' হয় ককপিট!
হ্যাঁ, কিছুটা এমনই হল। অভিযোগ, বান্ধবীকে সোজা নিজের ককপিটে ডেকে নিলেন এক বিমানচালক। কীভাবে বিমান ওড়ান, যন্ত্রপাতির 'ট্যুর' দিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার ওই পাইলট। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে দিল্লি যাচ্ছিল সেই বিমান। আর সেই সময়ে এভাবে বান্ধবীকে 'অ্যাপায়ন' করেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ককপিটেই কাটান সেই বিশেষ বান্ধবী। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক DGCA-র সুরক্ষা নীতি অনুযায়ী, এভাবে বাইরের কাউকে কখনই বিমানের ককপিটে প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুমতি নেই। কেবিন ক্রু-দের মধ্যে একজন বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে নেননি। তিনি ওই পাইলটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
শুধু ককপিটে নিয়ে গিয়ে বান্ধবীকে অ্যাপায়নই নয়। বিমানকর্মীর অভিযোগ, ক্রুদের সঙ্গে কথা বলে বিমানচালক নির্দেশ দেন, তাঁর বন্ধুকে যেন বিজনেস ক্লাসের(বেশি দামের বিলাসবহুল সিট) খাবার পরিবেশন করা হয়। আরও পড়ুন: ১৫ জন যাত্রীকে ফেলে রেখেই পাড়ি দিল Air India-র বিমান, কারণ জানলে অবাক হবেন
'এয়ার ইন্ডিয়া এই সমস্যার তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে,' জানিয়েছেন এয়ারলাইনের এক আধিকারিক। গত ৩ মার্চ বিমানসেবিকারা এই অভিযোগ জমা করেছিলেন।
এই বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তিনি এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
ফ্লাইট ক্রুদের শুক্রবার হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে DGCA। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে মিলেছে খবর।
অভিযোগ, AI 915-এ বোর্ডিংয়ের আগে থেকেই এই কাণ্ডকারখানা শুরু হয়ে যায়। কেবিন ক্রুরা তাঁদের রিপোর্টিং সময়ের বাইরে গিয়েও পাইলটদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ পরেও তাঁদের দেখা না পেয়ে বিমানের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা।
এদিকে বিমানচালকরা এদিন আসেন যাত্রীদেরই সঙ্গে। অভিযোগ, ক্যাপ্টেন ক্রুকে বিজনেস ক্লাসে খালি আসন থাকলে তাঁকে জানাতে বলেছিলেন। তিনি জানান, তাঁর এক বন্ধু ইকোনমি ক্লাসে যাচ্ছেন। তিনি তাঁকে আপগ্রেড করাতে চেয়েছিলেন। এটি যদিও প্রায়শই হয়ে থাকে। যদিও এদিন সেই সুযোগ না থাকায় বিমানসেবিকারা তা জানিয়ে দেন।
অভিযোগকারী বিমানসেবিকার দাবি, এরপর ক্যাপ্টেন তাঁকে তার মহিলা বন্ধুকে ডেকে ককপিটে নিয়ে আসতে বলেন। তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বাঙ্ক থেকে কিছু বালিশও আনতে বলেছিলেন। এরপর বিমানচালকের বান্ধবী এসে ফার্স্ট অবজারভারের আসনে বসেন।
'তিনি বলেন, ককপিট যেন দেখে 'ওয়েলকামিং' মনে হয়। এমন ভাব করছিলেন যেন তিনি তাঁর বান্ধবীর জন্য বসার ঘর সাজাচ্ছেন। এর উপর তিনি পানীয় এবং স্ন্যাকসের অর্ডার নিতে এবং ককপিটেই তা পরিবেশন করতে বলেন। আমি তখন তাঁকে বললাম, 'ক্যাপ্টেন, আমি ককপিটে অ্যালকোহল পরিবেশন করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না।' এটি বলায় তিনি খুব বিরক্ত হলেন বলে মনে হল। সেই মুহুর্ত থেকেই যেন তাঁর হাবভাব বদলে গেল। অভদ্র ব্যবহার করছিলেন। এমন আচরণ করছিলেন যে আমি যেন তাঁর ব্যক্তিগত চাকর,' অভিযোগে ব্যাখা করেছেন বিমানসেবিকা।
DGCA-এর সিভিল এভিয়েশন রেগুলেশন (CAR) অনুসারে: বিমান অপারেটরের কর্মী, যাঁর পাইলট-ইন-কমান্ডের (PIC) অনুমতি রয়েছে এবং যাঁকে নিরাপদ বিমানচালনার জন্য ককপিটে প্রয়োজন, শুধুমাত্র এমন ব্যক্তিদেরই ককপিটে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে তাঁদের আবশ্যিকভাবে রক্তের অ্যালকোহল মাত্রার পরীক্ষায় ছাড়পত্র পেতে হবে। আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে বিমানসেবিকার চুল টেনে মার যাত্রীর, দিল্লিতে ফিরল লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান