অনন্যা দত্ত
একটা সময় দাপট ছিল আলফা ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলফাকে ছাপিয়ে যায় করোনাভাইরাস ডেল্টা প্রজাতি। যা দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত সবথেকে ভয়ংকর ঢেউয়ের কারণ হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের নয়া একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করা হল। তার জেরে ঘুরেফিরে উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্ন - করোনা টিকার দুটি ডোজের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় কি আখেরে ক্ষতি হচ্ছে?
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজির গবেষকদের রিপোর্টেও সেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে ডেল্টা (বি.১.৬১৭.২) ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোখা আরও বেশি কঠিন। সেই করোনা প্রজাতির ফলে গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনাও বেশি। এমনকী টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও আক্রান্তের সংখ্যার বাড়তে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিষয়টি নিয়ে ভেল্লোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক গগনদীপ কঙ্গ বলেন, ‘ডেল্টা প্রজাতির ফলে যে গুরুতর রোগ হয়, তার বিরুদ্ধে কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা নিয়ে আমাদের পর্যাপ্ত তথ্য নেই। কিন্তু পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) এবং ক্রিক ইনস্টিটিউটের তথ্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলছে যে কোনও পরিবর্তনের দরকার কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের নীতি এবং মডেল পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।’
বৃহস্পতিবার পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আলফা ভ্যারিয়েন্টের থেকে ভারতে প্রথম হদিশ পাওয়া ডেল্টার (বি.১.৬১৭.২) ক্ষেত্রে হাসপাতালে বেশি ভরতি হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত ২৭ মে পিএইচইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অন্যান্য প্রজাতির নিরিখে ডেল্টার ক্ষেত্রে করোনা টিকার শুধুমাত্র প্রথম ডোজের কার্যকারিতা অনেকটা কম। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ফাইজারের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ৩৩.২ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। দ্বিতীয় ডোজের পর তা দাঁড়িয়েছে ৮৭.৯ শতাংশে। অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকার (কোভিশিল্ড) ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের কার্যকারিতা ৩২.৯ শতাংশ। যা দ্বিতীয় ডোজের পর দাঁড়িয়েছে ৫৯,৮ শতাংশে।
সেই বিষয়েই শুক্রবার নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। গবেষণাগারে বিভিন্ন করোনা প্রজাতির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতার পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ফাইজার-বায়োএনটেক টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা আলফা প্রজাতির থেকে ডেল্টাকে ৫.৮ গুণ কম রুখতে পারে। ডেল্টার মতো একইরকমভাবে টিকার কম কার্যকারিতা দেখা গিয়েছিল গামা প্রজাতির ক্ষেত্রেও। ল্যানসেটের গবেষকদের বক্তব্য, সেই তথ্য থেকে পরিষ্কার যে টিকার দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান কম রাখতে হবে। অর্থাৎ বেশি সংখ্যক মানুষের টিকাকরণের জন্য দুটি ডোজের ব্যবধান বাড়িয়ে দিলে ডেল্টা প্রজাতির ক্ষেত্রে স্বল্পকালীন সময় টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
সেই তথ্যের জেরেই ভারতের টিকা নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রাথমিকভাবে ভারতে ২৮ থেকে ৪২ দিনের (চার থেকে ছয় সপ্তাহ) ব্যবধানে কোভিশিল্ডের দুটি ডোজ প্রদান করা হত। কিন্তু সরকারি প্যানেলের পরামর্শে মার্চে সেই সময়সীমা পালটে চার-আট সপ্তাহ করা হয়। কিন্তু গত মাসে সরকারি প্যানেলের তরফে সেই ব্যবধান বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ (তিন থেকে চার মাস) করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা মেনে নেয় ন্যাশনাল টেকনিকাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই) এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তার ফলে আপাতত কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নেওয়ার ১২-১৬ সপ্তাহ (তিন থেকে চার মাস) পর মিলছে দ্বিতীয় ডোজ।
ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভের অধিকর্তা জানিয়েছেন, ডোজের সূচি জটিল বিষয়। 'কিছু লাভ থাকে, কিছু সমস্যা হয়। সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য কৌশল হতে পারে, কয়েকটি ক্ষেত্রে যদি আট সপ্তাহর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবধান বেশি করা যায়।'