বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, দুই আলাদা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম - জিওসিনেমা এবং ডিজনি প্লাস হটস্টার নাকি গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে। এ নিয়ে কানাঘুষো শুরু হতেই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ দাবি করছে, এই জল্পনা সত্যি হলে ভারতের ওটিটি বাজারে একাধিপত্য কায়েম করবে ভবিষ্যতের এই প্ল্যাটফর্ম।
কিন্তু, বহু জনের এই আশঙ্কার মধ্যে সুযোগ সন্ধানী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, দিল্লির কোনও এক প্রযুক্তিবিদের বিরুদ্ধে। সূত্রের দাবি, সেই ব্যক্তি নাকি 'জিওহটস্টার' ডোমেনটি ২০২৩ সালেই গোপনে কিনে নিয়েছেন! আর সেটা করতে গিয়েই ওই ব্যক্তি বিপাকে পড়তে চলেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বিষয়টা একটু ভেঙে বলা যাক। বর্তমানে জিওহটস্টার নামক একটি ডোমেন একটি ওয়েব পেজের মাধ্যমে খোলা যাচ্ছে! তাতে একটি ব্যানারও যোগ করা আছে। যাতে লেখা রয়েছে - 'জিওহটস্টার:বেস অফ এন্টারটেইনমেনট, স্ট্রিমিং সুন'!
অথচ, আপাত অতি সাধারণ এই ওয়েব পেজটিতে সংস্থার কোনও লোগো বা ব্র্যান্ডিং নেই। বদলে রয়েছে একটি আজব বার্তা। দাবি করা হচ্ছে, যে প্রযুক্তিবিদ এই ওয়েব পেজটি কিনেছেন, তিনিই নাকি ওই বার্তা দিয়েছেন।
সেই বার্তা 'রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্মীদের উদ্দেশে' করা হয়েছে। যেখানে তাঁদের 'ডিয়ার এগজিকিউটিভ' বলে সম্বোধন করেছেন ওই ব্যক্তি। প্রসঙ্গত, রিলায়েন্স গোষ্ঠী হল জিও সিনেমার মূল প্রতিষ্ঠাতা সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বার্তায় লেখা হয়েছে, 'আমি একজন অ্যাপ ডেভেলপার। দিল্লির বাসিন্দা। আমি আপাতত আমার নিজের সংস্থা খোলার চেষ্টা করছি। ২০২৩ সালে আমি যখন সোশাল মিডিয়ায় স্ক্রল করছিলাম, একটি খবরের অংশ আমার চোখে পড়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, আইপিএল সম্প্রচারের লাইসেন্স হারানোর পর থেকেই ডিজনটি প্লাস হটস্টারের দৈনিক সক্রিয় ইউজার লাগাতার কমছে। আর তাই, ডিজনি কর্তৃপক্ষ ওই সংস্থা কোনও ভারতীয় সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়ার বা তাদের সঙ্গে একত্রিত (মার্জ) হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে।'
'তখনই আমরা মনে হয়েছিল, সোনি আর জি-এর তো নিজস্ব মার্জার রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভায়াকম এইটিন (রিলায়েন্স গোষ্ঠীর) হল একমাত্র সংস্থা, যাদের ডিজনি প্লাস হটস্টারকে কেনার ক্ষমতা রয়েছে।'
'তখন আমার আরও মনে হল, এর আগে জিও যখন মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস সাভন কিনে নিয়েছিল, তখন তারা তার নাম বদলে রেখেছিল জিওসাভন.কম। তাই আমার মনে হল, তারা যদি ডিজনি প্লাস হটস্টারকেও কিনে নেয়, তাহলে হয়তো তার নাম বদলে রাখবে জিওহটস্টার.কম।'
অর্থাৎ, ওই অ্যাপ ডেভেলপারের বার্তা হল, এই ধারণা থেকেই তিনি 'জিওহটস্টার' ডোমেনটি আগেভাগেই কিনে নিয়েছেন। এরপরই ওই প্রযুক্তিবিদের প্রস্তাব, রিলায়েন্স যদি চায়, তাহলে তিনি ওই ডোমেনটি তাদের বিক্রি করতে প্রস্তুত। বদলে শুধুমাত্র ওই সংস্থাকে তাঁর একটি স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান। রিলায়েন্সকে শুধু সেই ব্যবস্থাটুকু করে দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ওই ডোমেনের মালিক জানিয়েছেন, 'আমি খুঁজে দেখছিলাম, ওই নামে কোনও ডোমেন পাওয়া যাচ্ছে কিনা। এবং সেটা আমি পেয়ে যাই। আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, এই ঘটনা যখন সত্যিই আমার সঙ্গে ঘটছে, তাহলে হয়তো আমি কেমব্রিজে আমার উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পেয়ে যাব।'
ওই প্রযুক্তিবিদের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগেই তার সংস্থার তৈরি করা একটি প্রজেক্ট কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অ্য়াক্সেলেরেট প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু, টাকার অভাবে ওই ব্যক্তি সংস্থা তাতে যোগ দিতে পারেননি।
তাঁর বার্তায় ওই ব্যক্তি লিখেছেন, 'এই ডোমেনটি আমি একটিমাত্র উদ্দেশ্যেই কিনেছি। যদি সত্যিই ডিজনি প্লাস হটস্টারের সঙ্গে জিওসিনেমা মিশে যায়, তাহলে আমি হয়তো কেমব্রিজে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।'
তাঁর বক্তব্য, হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক রিলায়েন্সের কাছে এটা হয়তো খুবই সামান্য খরচ। কিন্তু, তাঁর কাছে রিলায়েন্সকে এই ডোমেন বিক্রি করতে পারার অর্থ হল, একটি জীবন বদলে দেওয়া ঘটনা!
এই গোটা ঘটনাটি ঘটে বুধবার। পরবর্তীতে, বৃহস্পতিবার জানা যায়, রিলায়েন্সকে গোষ্ঠীকে ওই ডোমেন বিক্রি করার জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা চেয়েছেন ওই অ্যাপ ডেভেলপার। কিন্তু, রিলায়েন্স গোষ্ঠী নাকি তাঁকে সেই টাকা দেওয়ার বদলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে!
যদিও, এখনও পর্যন্ত এই ইস্যুতে রিলায়েন্স বা ডিজনি প্লাস হটস্টারের তরফে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।