দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি সরকার বনাম লেফটেন্যান্ট গভর্নর সংক্রান্ত একাধিক মামলা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, দিল্লিতে কেজরিওয়াল বা পরবর্তীতে অতিশী বনাম লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দ্বন্দ্ব চলে এসেছে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই। আমলা বদলি থেকে শুরু করে দুর্নীতি, একাধিক ইস্যুতে সরকার বনাম লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে সংঘাত দেখেছে দিল্লি। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টে একধিক মামলা হয়েছে। তবে এবার সরকার বদলাতে চলেছে দিল্লিতে। আম আদমি পার্টি দীর্ঘ এদশক পরে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে দিল্লিতে। ২৭ বছর পর দিল্লিতে সরকার গঠন করবে বিজেপি। এই আবহে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে সরকারের আর সংঘাত থাকবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বেশি ক্ষমতা দিতে আইন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল দিল্লির আপ সরকার। আপার দিল্লির আমলাতন্ত্রেও 'শেষ কথা' বলতেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছিল। তবে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাঁধে এই সব গুরুদায়িত্ব বিজেপি দিয়েছিল আপ সরকারের ওপরে ছড়ি ঘোরাতেই। পরে শীর্ষ আদালতে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সেই ক্ষমতা খর্ব হয়। যদিও ঘুরপথে ফের সরকারের হাত থেকে সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় কেন্দ্র। তবে এবার যখন দিল্লিতে 'ডাবল ইঞ্জিন' সরকার আসবে, তখন এই সব ক্ষেত্রে দুই পক্ষই সহমত পোষণ করবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, এর আগে GNCTD আইন, ২০২৩-কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল আম আদমি পার্টির সরকার। এই আইনে দিল্লির আমলাতন্ত্রের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা বর্তেছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ওপরেই। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দিল্লি সরকার শীর্ষ আদালতে একটি পিটিশন ফাইল করেছিল দিল্লি ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটারি কমিশনের চেয়ারপার্সন নিয়োগ নিয়ে বিবাদের জেরে। এরপরে দিল্লির স্কুলের শিক্ষকদের ফিনল্যান্ডে প্রশিক্ষণের জন্যে পাঠানো নিয়ে বিবাদ দেখা দিয়েছিল সরকার এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে। তা নিয়েও মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। এদিকে দিল্লি সরকারের 'ফরিস্তে' স্কিমের জন্যে টাকা বরাদ্দের ফাইল আটকে ছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে। সেই মামলাও গড়ায় শীর্ষ আদালতে। এদিকে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বেআইনি ভাবে গাছ কাটার ঘটনাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা ঝুলছে সুপ্রিম কোর্টে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সব মামলার কী হয়, তা নিয়ে কৌতুহলী অনেকেই।
এই সবের মাঝে দিল্লির আমলাতন্ত্র নিয়ে মামলায় আম আদমি পার্টি বড় জয় পেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তবে শীর্ষ আদালতের এই সংক্রান্ত রায়ের পরপরই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন একটি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আসে। তাতে ফের আমলাতন্ত্রের চাবিকাঠি চলে গিয়েছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতেই। সেই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল আম আদমি পার্টির সরকার। সেই মামলাটি আজও ঝুলছে শীর্ষ আদালতে। এই সব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন চলছে জল্পনা।