ভারতীয় দণ্ড বিধি (আইপিসি)-র ৪৯৮এ ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে আবারও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করল আদালত। এবার দিল্লি হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, মহিলাদের একাংশ শুধুমাত্র তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হেনস্থা করতেই এই আইনের অপব্যবহার করছেন। এমনকী, এই আইনকে হাতিয়ার করেই নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করছেন তাঁরা।
২০১৭ সালে এই ধারাতেই রুজু করা এক মহিলার মামলার প্রেক্ষিতে এই পর্যবেক্ষণ করেছে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অমিত মহাজনের বেঞ্চ। বিচারপতি ওই মামলা খারিজ করে দেন।
সংশ্লিষ্ট মামলাকারী তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে পণের দাবিতে অত্যাচার এবং তাঁর স্ত্রীধন (সাধারণত বধূর গয়না এবং বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া মূল্যবান সম্পদ) ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু করেছিলেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রেক্ষিতে রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মহাজন। যা প্রকাশ করা হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি। তাতে বিচারপতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানান, যে আইন মূলত বিবাহিতাদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে এবং তাঁদের সম্মান, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করতে প্রণয়ন করা হয়েছিল, ইদানীংকালে সেই একই আইনকে হাতিয়ার করে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হচ্ছে।
বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছেন, অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, মুহূর্তের রাগের বশে মামলা রুজু করা হচ্ছে। এবং মামলাকারীদের এই বিষয়ে তাঁদের আইনজীবীরাই উৎসাহিত করছেন। কিন্তু, প্রকৃত যেটা সমস্যা সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, একদিকে যখন দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলার রায়দান করা হয়, সেই একই দিনে সুপ্রিম কোর্ট অন্যান্য আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল, যদি দেখা যায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগকে হাতিয়ার করে শ্বশুরবাড়ির সেইসব আত্মীয় বা সদস্যদেরও অহেতুক মামলায় টানা হচ্ছে, যাঁদের সঙ্গে আসল ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই, তাহলে সেই অভিযুক্তদের অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেটা ন্যায়ালয়কেই দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসেও এই আইনের যথেষ্ট অপব্যবহার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রবল অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, মহিলাদের একাংশ শুধুমাত্র 'ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি' করার জন্যই এই আইনকে অন্য়ায়ভাবে হাতিয়ার করছেন।
দিল্লি হাইকোর্টের মামলাটিতে মামলাকারী বধূর স্বামীর আইনজীবী পালটা দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগই সাজানো। আসলে ওই দম্পতি ২০১৪ সাল থেকেই আলাদা থাকছিলেন। কারণ, ওই মহিলার অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। স্বামীর দাবি, সেই পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর ছবি দেখার পরই তাঁর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
স্বামীর দাবি, নিজেদের অনৈতিক আচরণ লোকানোর জন্যই তাঁর স্ত্রী এই বধূ নির্যাতনের মামলা করেন। যদিও এর আগে ওই মহিলাই নিম্ন আদালতে ডিভোর্সের মামলা করেন। এবং ২০১৯ সালে নিম্ন আদালতও ডিভোর্সের পক্ষেই রায় দেয়। কিন্তু, এরপর মহিলা মিউচুয়াল ডিভোর্স থেকে নিজের সম্মতি প্রত্যাহার করেন এবং পালটা স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা রুজু করেন।
এই প্রেক্ষাপটে দিল্লি হাইকোর্ট বধূ নির্যাতন সংক্রান্ত এফআইআর-টি খারিজ করে দেয়। কারণ, তার অনেক আগেই মহিলা ডিভোর্সের মামলা করেছিলেন এবং ডিভোর্স পেয়েও গিয়েছিলেন।