রেস্তোরাঁ বা হোটেলে খেতে এসে কোনও গ্রাহক পরিষেবা পারিশ্রমিক (সার্ভিস চার্জ) বা বকশিস (টিপস) দেবেন কিনা, সেটা একেবারেই তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে (ভলান্টারি)। কখনও তাঁকে সেই খাতে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করা যায় না। বা এই মর্মে রেস্তোরাঁ বা হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার বাড়তি টাকা সংশ্লিষ্ট খাবারের বিলে যোগ করতে পারে না। শুক্রবার (২৮ মার্চ, ২০২৫) সংশ্লিষ্ট দু'টি মামলা প্রসঙ্গে এই রায় দিল দিল্লি হাইকোর্ট।
লাইভ ল.ইন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে এই সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছিল 'কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ' (সিসিপএ)। যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল - কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁ 'স্বয়ংক্রিয় বা নিয়মিতভাবে' এই ধরনের কোনও অর্থ ক্রেতার খাবারের বিলে যুক্ত করতে পারবে না।
সেই গাইডলাইন চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে দু'টি মামলা রুজু করেছিল 'ফেডারেশন অফ হোটেল অ্য়ান্ড রেস্টোরেন্ট অ্য়াসোসিয়েশনস অফ ইন্ডিয়া' (এফএইচআরএআই) এবং 'ন্যাশনাল রেস্টোরেন্ট অ্য়াসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া' (এনআরএআই)। শুক্রবারের শুনানিতে এই দুই সংগঠনেরই করা আবেদন খারিজ করে দেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতিভা এম সিং।
প্রসঙ্গত, এই মামলাটির রায় গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে স্থগিত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, এদিন সিসিপএ-র গাইডলাইনকেই স্বীকৃতি দিল দিল্লি হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট রিট পিটিশনগুলি খারিজ করে মামলাকারী দুই সংস্থাকেই ১ লক্ষ টাকা করে সিসিপিএ-র কাছে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই টাকা পরবর্তীতে গ্রাহক কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
আদালত এদিনের রায়ে স্পষ্ট করে দেয়, যদি সার্ভিস চার্জ খাবারের বিলে যুক্ত করে দেওয়া হয় এবং গ্রাহকে তা দিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে সেই আচরণ আইনবিরুদ্ধে হিসাবে গণ্য করা হবে। কিন্তু, যদি কোনও গ্রাহক স্বেচ্ছায় কাউকে বকশিস দিতে চান, তাহলে তাতে আইনত কোনও বাধা থাকবে না।
একইসঙ্গে, এদিনের রায় দানে সিসিপিএ-র ক্ষমতা সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবহিত করে দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত বলে, সিসিপিএ কেবলমাত্র কোনও উপদেষ্টা সংস্থা বা পরামর্শদাতা নয়। সিসিপিএ-র হাতে সেই ক্ষমতা আছে, যে ক্ষমতাবলে তারা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং অন্যায্য ব্যবসা রুখতে গাইডলাইন তৈরি করতে পারে এবং তা বলবৎ করতে পারে।
আদালত আরও জানায়, শ্রেণি হিসাবে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের তুলনায় গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা অধিক জরুরি। কারণ, সমগ্র সমাজের নিরিখে সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।